Search This Blog

Sunday, April 24, 2011

এএলএস পদ্ধতির উদ্ভাবক ড. রুব্হানা রকীবসকল অঙ্গের যক্ষ্মা নির্ণয় সম্ভব


আইসিডিডিআর,বি যক্ষ্মা বা টিবি রোগ শনাক্তকরণে উদ্ভাবিত একটি নতুন পদ্ধতির জন্য গত বছর পেটেন্ট বা মেধাস্বত্ব লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘ গবেষণা-ইতিহাসে এটাই প্রথম মেধাস্বত্ব বা পেটেন্ট। এই গবেষণা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছেন আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট নিউট্রিশনাল বায়োকেমিস্ট্রি গবেষণাগারের প্রধান . রুব্হানা রকীব। এটি অ্যান্টিবডি প্রডিউসড বাই পেরিফেরাল ব্লাড লিম্ফোসাইটস ইন কালচার সুপারনাট্যান্ট বা এএলএস নামে পরিচিত। আগে ফুসফুস ছাড়া দেহের অন্য কোথাও যক্ষ্মা হলে তা শনাক্ত করার তেমন কোনো পরীক্ষা চিকিসকদের হাতে ছিল না। আবার রোগীর বিসিজি টিকা নেওয়া থাকলে প্রচলিত পদ্ধতিতে তা যক্ষ্মা পরীক্ষায় জটিলতা তৈরি করত। এএলএসের মাধ্যমে সে সমস্যাও দূর হয়েছে। আবিষ্কারটি গবেষণা যক্ষ্মা চিকিসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। দেশে-বিদেশে স্বীকৃতিও পেয়েছে . রুব্হানা রকীব-এর সঙ্গে এএলএস নিয়ে কথা বলেছেন হুমায়রা ফেরদৌস

এমন একটি গবেষণা কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য অভিনন্দন। সদ্য পেটেন্টকৃত নতুন পদ্ধতিটির বৈশিষ্ট্য কী?
নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবনে পুরনো কিংবা প্রচলিত পদ্ধতিগুলো অচল হয়ে যাবে এমন কিন্তু নয়। যদি প্রচলিত টেস্টগুলো দিয়েই কাজ হয়ে যায় তবে আর নতুনটিতে যাওয়ার দরকার পড়বে না। তাই যক্ষ্মা সন্দেহ হলে প্রচলিত পদ্ধতিতেই আগে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। কিন্তু আপনারা জানেন, যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসে নয়, অন্যান্য অঙ্গ যেমন_হাড়, ব্রেন, পাকস্থলীতে হতে পারে। এগুলোকে একস্ট্রা পালমোনারি টিবি বলা হয়। এসব ক্ষেত্রে স্কিন টেস্টের মাধ্যমে বা অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করে যক্ষ্মা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। কিন্তু চিকিসকরা সন্দেহ করছেন, রোগীর দেহে টিবি জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে, কেবল তখনই এই নতুন অ্যান্টিবডি প্রডিউসড বাই পেরিফেরাল ব্লাড লিম্ফোসাইটস ইন কালচার সুপারনাট্যান্ট বা এএলএস পদ্ধতি প্রয়োগ করলে রোগ নির্ণয় করা যাবে।

এএলএস সম্পর্কে একটু ব্যাখ্যা করুন
এএলএস পদ্ধতিতে প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর রক্তের লিম্ফোসাইটকে কালচার করে সেসব থেকে নিঃসৃত অ্যান্টিবডি নিয়ে ঊখওঝঅ (আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি) পরীক্ষা করা হয়। যাদের দেহে সক্রিয় টিবি বা যক্ষ্মার জীবাণু বিদ্যমান, তাদের লিম্ফোসাইটে অ্যান্টিবডির পরিমাণ সুস্থ মানুষের তুলনায় বেশি থাকে। আমাদের পরীক্ষাগারে এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করেই যক্ষ্মার জীবাণু শনাক্ত করা যায়।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, রক্তের সিরাম থেকে নিঃসৃত অ্যান্টিবডির সঙ্গে লিম্ফোসাইট থেকে নিঃসৃত অ্যান্টিবডির কিছু গুণগত পার্থক্য আছে। সিরামে অ্যান্টিবডির অস্তিত্ব বিভিন্ন কারণেই পাওয়া যেতে পারে। এমনকি কেউ যদি কোনো রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নিয়ে থাকে, তা হলেও সিরামে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া যাবে; যা সঠিকভাবে রোগ শনাক্তকরণে সংশয় সৃষ্টি করবে। কিন্তু লিম্ফোসাইট কেবল তখনই অ্যান্টিবডি নিঃসরণ করে, যখন দেহ নতুন কোনো ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত হয়। এখন কোন ধরনের অ্যান্টিবডি কিসের জন্য নিঃসৃত হচ্ছে, সেটা অনুসন্ধান করার মাধ্যমেই টিবির জীবাণু দেহে আছে কি না সেটা বলে দেওয়া হয়। আর নতুন আবিষ্কৃত পদ্ধতিটি এই দুই ধরনের অ্যান্টিবডি আলাদা করে বিবেচনা করে বলেই এটি অন্য পদ্ধতি থেকে স্বতন্ত্র। তা ছাড়া পদ্ধতিতে মাত্র দুদিনের মধ্যেই ফলাফল চলে আসে। এটাও পদ্ধতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য। স্বল্পতম সময়ে রোগ নির্ণয় করা হয় বিধায় দ্রুততম সময়ের মধ্যেই রোগীকে চিকিসাসেবা দেওয়া সম্ভব।

আইসিডিডিআরবিতে কত দিন হলো পরীক্ষাটি চালু করা হয়েছে?
প্রায় ছয় মাস হলো আইসিডিডিআরবিতে এএলএস পরীক্ষার মাধ্যমে টিবি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।

যক্ষ্মা জীবাণু ছাড়া আর কোনো ক্ষেত্রে কি এএলএস পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়?
লিম্ফোসাইট থেকে নিঃসৃত অ্যান্টিবডি নিয়ে তো আমরা বেশ কিছু দিন ধরে গবেষণা করে যাচ্ছি; জন্য এত দিন পর বেশ কিছু গবেষণার ফল হাতে আসতে শুরু করেছে, এর মধ্যে কিছু কিছু খুব চমকপ্রদও। যেমন_বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে হয়তো ধরনের অ্যান্টিবডিগুলো বায়োমার্কার (যে উপাদানের সাহায্যে জৈবিক অবস্থা বা বায়োলাজিক্যাল স্টেট নির্দেশ করা হয়) হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কারণ কোনো ওষুধ, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার ফলে রোগী কতটুকু সুস্থ হয়ে উঠল, সেটা বোঝার কোনো পন্থা আমাদের হাতে ছিল না। এএলএস পদ্ধতি দিয়ে অচিরেই হয়তো সেটাও করা যাবে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও কি এএলএসের ব্যাপারে আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে?
এরই মধ্যে রুয়ান্ডাসহ আফ্রিকার কিছু দেশে গিয়ে আমরা পদ্ধতির ব্যবহার শিখিয়ে দিয়ে এসেছি। জাপানসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

যক্ষ্মার জীবাণু নিয়ে কাজ করতে কিভাবে আগ্রহী হলেন?
ব্যাপারটা একই সঙ্গে আকস্মিক কাকতালীয়। আমি মূলত মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ-ব্যবস্থা বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে এর কার্যপদ্ধতি নিয়ে কাজ করছিলাম, প্যাথলজিক্যাল বা ডায়াগনস্টিক টেস্ট-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে নয়। সেটারই একটা অংশ ছিল লিম্ফোসাইট থেকে নিঃসৃত অ্যান্টিবডির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ। এভাবেই একসময় রোগ শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিবডিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে উপলব্ধি করলাম। তখন আমার গবেষণার ক্ষেত্রও এদিকে সম্প্রসারিত করলাম। এভাবেই আমার জড়িত হয়ে যাওয়া। আর গবেষণা সব সময়ই আমার পছন্দের একটি বিষয়।

আমাদের মতো দেশে ধরনের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা কতটা জরুরি?
খুবই জরুরি। টেকনোলজি ট্রান্সফার একতরফাভাবে হয় না। কেবল বাইরের দেশ বা উন্নত বিশ্বের প্রযুক্তিই আমরা ব্যবহার করব, অথচ আমাদের নিজেদের উদ্ভাবিত কিছুই থাকবে না_এমন ধারণা পোষণ করা কোনোভাবেই উচিত নয়। বরং দেশের গবেষণা খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। দেশের বিজ্ঞানীদের ওপর আস্থা রাখাও আবশ্যক। কারণ পর্যাপ্ত সুযোগ সহযোগিতা পেলে দেশে থেকেও বিশ্বমানের গবেষণা করা যায় এর প্রমাণ তো বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আমাদের বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন।

অভিযোগ আছে, গবেষণার ফল আসতে সময় লাগে; জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনীহা কাজ করে_ ব্যাপারে আপনার মতামত?
যেকোনো কাজ সঠিকভাবে করতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। আইসিডিডিআরবিতে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় সুযোগ পাওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার এত বছর পর একসঙ্গে অনেক বিষয়ে ফল (যেমন- ম্যালেরিয়া জীবাণু বহনকারী নতুন প্রজাতির মশা শনাক্তকরণ, উদরাময়বিষয়ক কিছু গবেষণার নতুন ফল ইত্যাদি) আসতে শুরু করেছে। জন্য নতুন কিছু উদ্ভাবনে সময়ের ব্যাপারটা তো মাথায় রাখতেই হবে। কিন্তু সেটা নিশ্চয়ই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার পথে প্রতিবন্ধক হতে পারে না।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য রইল শুভেচ্ছা

m~Z&ª: দৈনিক কালেরকন্ঠ(22/01/2011)

No comments:

Post a Comment