এইচআইভি প্রতিষেধক!
সত্যিই কি তাই? মুক্তি মিলবে ঘাতক ব্যাধি এইডস থেকে? না এসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো এখনই দেওয়া সম্ভব নয়; কিন্তু বিগত কয়েক বছরের গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে এ বছর বিজ্ঞানী ও গবেষকরা পেয়েছেন- এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে প্রাপ্ত দুই ধরনের অ্যান্টিবডি বেশ কিছু ক্ষেত্রে এ ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম। এর আগেও চারটি অ্যান্টিবডির ক্ষেত্রে এমন তথ্য বিজ্ঞানীরা পেয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলো নিয়ে পরে খুব বেশি দূর এগোনো সম্ভব হয়নি। এবারকার ফলাফল ভিন্ন কথা বলছে। বিষয়টি যদিও আরো অনেক গবেষণার দাবিদার; কিন্তু বিশ্বব্যাপী এইডসের ভয়াবহতার বিবেচনায় এমন একটি প্রতিষেধক যে যুগান্তকারী পরিবর্তন করবে_সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
বিজ্ঞানীরা এ বছর চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করতে পারেননি; কিন্তু বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে একটি ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন যে পর্যাপ্ত পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। অর্থাৎ কেবল হেঁটেই আপনি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারবেন! তবে হ্যাঁ, সেই হাঁটাও হতে হবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে একটা তাল-লয়-ছন্দ মেনে চলে। ইংরেজিতে এর একটা গালভরা নাম আছে_ব্রিস্ক। বিশেষ করে স্তন ও কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে। এমন তথ্য হাতে পাওয়ার পর এ বছরই প্রথমবারের মতো আমেরিকার কলেজ অব মেডিসিন ক্যান্সারের চিকিৎসায় সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে একদল শারীরিক শিক্ষক বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
অ্যালঝেইমার্সের চিকিৎসা
ব্যাপারটা অনেকটা এ রকম_হাতের আঙুলে একটু ফুটো করুন, তারপর সেখানে কেমোথেরাপি প্রয়োগ করুন। এতেই বয়সকালের পীড়াদায়ক সমস্যা স্মৃতিবিভ্রম বা স্মৃতিবিকৃতি থেকে রক্ষা পাবেন। এ বছর ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অ্যালঝেইমার্স প্রতিরোধে এমন কিছুরই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁদের গবেষণালব্ধ বলছে যে আমাদের ত্বকের একটি উপাদানের পরীক্ষা করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্মৃতি-বিকৃতির কারণ, ধরন, বর্তমান অবস্থা নির্ণয় করা সম্ভব। পরে কেমোথেরাপির সহায়তায় সেটি দূর করতে পারলেই সেরে যাবে অ্যালঝেইমার্সের মতো কঠিন রোগও।
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের আভাস
উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টরেল যে হার্ট অ্যাটাক ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে সেটা জানা ছিল আগেই। কিন্তু এ বছর আরো নতুন সূচক আবিষ্কারের ঘোষণা এসেছে, যার মাধ্যমে আরো নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হবে কে কতটুকু ঝুঁকির মধ্যে আছেন। অ্যান্ডোপাট ও ভেন্ডেসিস নামক দুটি যন্ত্রের মাধ্যমে রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা পরিমাপ করে অচিরেই হয়তো বলে দেওয়া সম্ভব হবে যে কারা কী ধরনের বিপৎসীমায় অবস্থান করছেন। বস্তুত রক্তনালিকা যেটুকু স্থিতিস্থাপক হওয়া প্রয়োজন, তার চেয়ে কম বা বেশি হলেই এই পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে। পদ্ধতিটি নন-ইনভ্যাসিভ বা অপারেশন করা ব্যতীত করা যায় বলে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে খরচও অনেক কম পড়বে।
দাঁতের ক্যারিজ ঠেকানোর পদ্ধতি
নেদারল্যান্ডসের চিকিৎসকরা দাঁতে ক্যারিজ হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে যে প্ল্যাক দায়ী তার অ্যানজাইমটির গঠন ও কার্যপদ্ধতি বের করতে সমর্থ হয়েছেন। ফলে ভবিষ্যতে দাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষত হওয়া রোধ করা যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রফেসর বাক ডিঙ্ট্রা ও লুবার্ট ডিকহুজেন দাঁতের গাত্রে প্লাক জমে থাকার কারণ হিসেবে দায়ী গ্লুকানসুক্রোজ অ্যানজাইমটির গঠন ও কার্যকারিতা আবিষ্কার করেছেন। দেখা গেছে, দাঁতে ক্যারিজ করতে যেসব ব্যাকটেরিয়া কাজ করে তারা আসলে এই অ্যানজাইমটি ব্যবহার করে। তারা যদি প্লাকের ভেতর থাকা এই অ্যানজাইমটি না পায়, তাহলে ক্যারিজ করতে পারবে না। এখন এই অ্যানজাইমটির কার্যক্রম করার ব্যাপারে গবেষণা চলছে। যদি এই গবেষণাটি সফল হয়, তবে দাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষত হওয়া ঠেকানো যাবে। প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
ব্যথামুক্ত দাঁতের ফিলিং
ফ্লোরাইড আবিষ্কারের পর বলা হচ্ছে ডেন্টাল চিকিৎসায় এটি সবচেয়ে যুগান্তকারী আবিষ্কার। ফ্রান্সের একদল বিজ্ঞানী এমন একটি জেল তৈরি করেছেন, যা দাঁতের ক্যারিজের পাশে কয়েক দিন রেখে দিলে নতুন করে ক্যারিজ তো হবেই না, পুরনো ক্যারিজটিও ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যাবে। পেপটাইড এমএসএইচসমৃদ্ধ (মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন) ওই জেলটি ব্যবহার করলে ড্রিল করে ফিলিং করা বা অ্যানেসথেশিয়া ইনজেকশন দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। বর্তমানে ইঁদুরের দাঁতে গবেষণাটি চলছে। আরো কয়েকটি প্রাণীর দাঁতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মানব দাঁতে এটি প্রয়োগ করা হবে। এখন ক্যারিজের চিকিৎসায় ড্রিল করে পুরো ক্যারিজ সরিয়ে ওই স্থানে বিভিন্ন ধরনের ফিলিং ম্যাটেরিয়াল প্রয়োগ করা হয়। এটি অনেকের কাছেই ভীতিকর। নতুন এ গবেষণাটি তাদের জন্য আশার বাণী নিয়ে এসেছে।
সূত্র : টাইম, রিডার্স ডাইজেস্ট, বিবিসি ও টেলিগ্রাফ
Search This Blog
Sunday, April 24, 2011
ওষুধ ও রোগ শনাক্তকারী পদ্ধতির যত আবিষ্কার
Labels:
সুস্থ থাকুন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment