Search This Blog

Tuesday, April 19, 2011

গর্ভকালীন কুসংস্কার : বিপদের কারণ

ডা. দিবাকর সরকার

খোদেজা বেগম, বয়স ২৫, বসবাস করেন তেরখাদি নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। স্বামী দিনমজুর। বিয়ের দুই বছরের মাথায় মা হতে যাচ্ছেন। সময় শাশুড়ি গ্রামের মুরবি্বদের বিভিন্ন কথা উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হচ্ছে। শাশুড়ি বলেছেন, গর্ভবতী সময়ে কম খাবার গ্রহণ করা দরকার। এতে নাকি বাচ্চার জন্মগ্রহণে সুুবিধা হয়, জন্মদানে কষ্ট কম হয় এবং ওই সময় বাচ্চাও কম কষ্ট পায়। তাই বাচ্চার কথা চিন্তা করে খোদেজা প্রচণ্ড ক্ষুধা সত্ত্বেও কম খাবার খান। ধীরে ধীরে শারীরিক দুর্বলতা বাড়তে লাগল এবং সন্তান জন্মের নির্ধারিত তারিখের বেশ কিছু দিন আগেই খোদেজার প্রসব বেদনা উঠল। হাসপাতালে জন্ম দিল এক ছেলেসন্তান। কিন্তু ওজন অত্যন্ত কম হওয়ায় জম্মের দুই ঘণ্টার মধ্যে সেই বাচ্চা ভয়ংকর অসুস্থ হয়ে পড়ল।
খোদেজার মতো অসংখ্য মা রকম পরিস্থিতির শিকার হন। কারণ অজ্ঞতা, শিক্ষার অভাব। আবার অনেক মেয়ে, বিশেষ করে বয়স্ক মায়েরা বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার বিশ্বাস করেন এবং অন্যদের বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করেন। আসন্ন সন্তানের মঙ্গল হবে মনে করে গর্ভবতী মা এসব কুসংস্কার মেনেও চলেন।
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের দেহের বাহ্যিক বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ জরায়ুরও বিশেষ পরিবর্তন সাধিত হয় এবং মাসিক শুরু হয়। কিন্তু অনেকে এটাকে বলেন দূষিত রক্ত, যা কোনো অবস্থায়ই ঠিক নয়। আমাদের দেহে কোনো দূষিত রক্ত নেই এবং এটা মেয়েদের দেহের পরিবর্তনের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে লুকোছাপার কিছু নেই। পায়খানা-প্রস্রাবের মতোই একেবারে সাধারণ ঘটনা এটি।
আমাদের অনেক মায়ের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে গর্ভবতী অবস্থায় বেশি খাবার গ্রহণ করলে বাচ্চা মায়ের গর্ভে বড় হয়ে যায়। ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসব হয় না, সিজার করতে হয়। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। গর্ভবতী অবস্থায় খাবারের পরিমাণ খুব বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন নেই, তবে খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যেমন_দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, শাকসবজি রাখা উচিত। পুষ্টিকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা বাচ্চার দেহের বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে, কিন্তু মায়ের দেহের ওজন খুব একটা বৃদ্ধি পায় না। অধিক খাদ্য গ্রহণে বাচ্চার আকার স্বাভাবিক হয়, সুস্থ শিশু হিসেবে জন্ম নেয়। কিন্তু কম খাদ্য গ্রহণে বাচ্চার বৃদ্ধি গঠন ব্যাহত হয়। তাই অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
গর্ভকালে এবং জন্মের ঠিক পরের সময়ে খাবারের ব্যাপারে বিভিন্ন কুসংস্কার আমাদের দেশের নানা স্থানে প্রচলিত আছে। যেমন_গর্ভপাতের জন্য আনারস দায়ী, নারিকেল গ্রহণ করলে বাচ্চা অন্ধ হয় অথবা হাসের ডিম খেলে শ্বাসকষ্ট হয় ইত্যাদি। অনেকে গরম খাবার গ্রহণে বিরত থাকতে বলেন। বিশেষ করে হিন্দু মায়েরা সময় মাছ-মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে মায়েদের দেহ পুনর্গঠনে বাধা সৃষ্টি হয়, বাচ্চার শরীরও অসুস্থ হয়।
তাই গর্ভকালীন এবং জন্মের পর সব কুসংস্কারের ঊধর্ে্ব থেকে মায়েদের মনে সাহস জোগানো এবং তাদের ফুল্ল রাখা সবার কর্তব্য আমাদের জীবনপ্রক্রিয়ার এক স্বাভাবিক অধ্যায়।

লেখক : সহকারী রেজিস্ট্রার
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

m~Z&ª: দৈনিক কালেরকন্ঠ(29/01/2011)

No comments:

Post a Comment