Search This Blog

Monday, April 18, 2011

কুষ্ঠরোগ


কুষ্ঠ: প্রয়োজন চিকিসা মমতা বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার লোক কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়। জাতীয় কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সাবেক আবাসিক চিকিসকডা. রফিক আহমেদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন ডা. সাকলায়েন রাসেল
কুষ্ঠকে বিধাতার অভিশাপ মনে করে আক্রান্ত রোগীকে আগে ঘৃণার চোখে দেখা হতো। আক্রান্ত রোগীকে সম্পূর্ণ আলাদা করে, দূর থেকে খাবার দেওয়া হতো। একসময় কুষ্ঠরোগ দেশেও ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছিল। এখন বিশ্বে প্রায় দশমিক ৩২ মিলিয়ন লোক কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত।

কুষ্ঠরোগ কী
কুষ্ঠ জীবাণুঘটিত রোগ। রোগে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ হলেও তা তেমন ছোঁয়াচে নয়। মূলত মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি জীবাণু দিয়ে রোগ হয়। জীবাণু মস্তিষ্কের বাইরের স্নায়ু, ত্বক, অণ্ডকোষ, চোখ নাকের মিউকাস মেমব্রেনকে আক্রান্ত করে। কুসংস্কারের কারণে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিক মানসিকভাবে নানা বিড়ম্বনার শিকার হন। যেকোনো বয়সেই রোগ হতে পারে। তবে পাঁচ থেকে ১৫ বছর বয়স কিংবা ৩০ বছরের ঊধর্ে্ব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

উপসর্গ
কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এক বছর পর্যন্ত কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ পায় না। সাধারণত সংক্রমণের পাঁচ-সাত বছর পর কুষ্ঠরোগের উপসর্গ প্রকাশ পায়। রোগে প্রধানত চামড়া স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়। রোগের শুরুতে শরীরের নিদির্ষ্ট স্থানে ফ্যাকাশে সাদা দাগ দেখা যায়। দাগে কোনো ব্যথার অনুভূতি থাকে না, খসখসে হয়ে যায়, লোম উঠে যায়। চিকিসায় বিলম্ব হলে বিকলাঙ্গ হওয়া শুরু হয়।

কুষ্ঠরোগের ধরন
ত্বকে আক্রান্তের স্থান অনুযায়ী কুষ্ঠরোগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়_ পসিব্যাসিলারি_এটি অসংক্রমিত ধরনের। মাল্টিব্যাসিলারি_এটি সংক্রমিত ধরনের।

কুষ্ঠরোগ কিভাবে ছড়ায়
আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে দুই-এক দিনের মেলামেশায় রোগ হয় না। রোগ ছড়াতে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘদিন মেলামেশার প্রয়োজন পড়ে। স্পর্শের মাধ্যমে রোগ খুব কম ক্ষেত্রেই হতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
অন্য রোগের মতো রোগ নির্ণয়ে তেমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। চিকিসকরা উপসর্গ দেখেই নিশ্চিত হয়ে যান কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়েছেন কি না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্কিন বায়োপসি এবং রক্তের কিছু পরীক্ষা করা হয়।

চিকিসা
১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী হ্যানসেন প্রথম রোগের কারণ নির্ণয় করেন। তবে কৃত্রিমভাবে রোগের জীবাণুর প্রজনন ঘটানো সম্ভব না হওয়ায় দীর্ঘদিন রোগের কোনো সঠিক চিকিসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে ১৯৬০ সালে বিজ্ঞানী শেফার্ড ইঁদুরের পায়ের নরম অংশে এর প্রজনন ঘটিয়ে প্রতিষেধক আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চিকিসার শুরুতে রোগীকে বোঝাতে হবে যে কুষ্ঠ কোনো ভয়ানক রোগ নয়। ঠিকমতো চিকিসা নিলে রোগ ভালো হয়ে যায়। রোগের ধরন মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ওষুধ ঠিক করা হয়। রোগীকে দীর্ঘদিন ওই ওষুধ সঠিক নিয়মে খেতে হয়। কয়েকটি ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের কুষ্ঠ নিরাময় করা সম্ভব। সরকারি প্রায় সব হাসপাতালে কুষ্ঠ বিভাগের মাধ্যমে ওই ওষুধ বিনা মূল্যে রোগীদের দেওয়া হয়। ওই ওষুধ নিয়মিত খাওয়া উচিত। কোনোভাবেই ভুলে গেলে চলবে না। একটি বিষয় সবার জানা উচিত, রোগের শুরুতে অর্থাছয় মাসের মধ্যে চিকিসা শুরু করলে রোগ সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব। চিকিসায় দেরি করলে রোগী বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

কোথায় চিকিসা করাবেন
যেকোনো সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও রোগের চিকিসা হয়। তবে সরকারিভাবে ঢাকার মহাখালীতে, নীলফামারী এবং সিলেটে আলাদাভাবে বিশেষায়িত কুষ্ঠ হাসপাতাল আছে। ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন এনজিও কুষ্ঠরোগীর চিকিসা দেয়।

কুষ্ঠরোগের জটিলতা
-
পুরুষের লেপ্রোমেটাস কুষ্ঠ হলে শারীরিকভাবে মেলামেশার শক্তি হারিয়ে ফেলে। ফলে বন্ধ্যত্ব হতে পারে।
-
চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
-
নাকে হলে নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে, নাক ক্ষয়ে যেতে পারে।
-
পায়ের নিচে ক্ষত হতে পারে।
-
কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কুষ্ঠরোগ প্রতিরোধের উপায়
-
কুষ্ঠ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা।
-
জনসচেতনতা তৈরি।
-
রোগ সম্পর্কে কুসংস্কার দূর করা এবং
-
আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে নির্গত তরলজাত পদার্থের সংস্পর্শে না আসা।

বাংলাদেশ কুষ্ঠরোগ
এখনো প্রতিবছর দেশে প্রায় দুই হাজার লোক কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হন। নীলফামারী, গাইবান্ধা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ঢাকা মেট্রোপলিটন সিটি কুষ্ঠপ্রবণ এলাকা বলে চিহ্নিত

সুত্র: দৈনিক কালেরকন্ঠ (29/01/2011)

No comments:

Post a Comment