কিডনী বিকল ও ডায়ালাইসিস
আমাদের শরীরে দুটো কিডনি আছে যার সাধারণ কাজ হচ্ছে শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ, পানি এবং এসিড বের করে দেয়া এবং এর মাধ্যমে শরীরেরঅতি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট (যেমন সোডিয়াম, ক্লোরাইড) এর পরিমাণ রক্তে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাখা। এ ছাড়াও পরিপাকের পর শরীরের জন্যঅপ্রয়োজনীয় পদার্থ যেমন ইউরিয়া, ক্রিয়াটিনিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে রক্তে এর পরিমাণ সাধারন মাত্রায় রাখা ও কিডনির একটি অন্যতম গুরুত্বপুর্ণকাজ । এছাড়াও ইরাইথ্রোপোয়েটিন নামক বিশেষ একটি হরমোন যা রক্তের হিমোগেস্নাবিন তৈরীতে বিশেষ প্রয়োজনীয় কিডনি থেকে উৎপাদিত হয়।ভিটামিন ডি শরীরে যে অবস্থায় ক্রিয়া করে তা রুপান্তরেও কিডনির বিশেষ ভূমিকা আছে।
সাধারণ অবস্থায় একটি সুস্থ কিডনির পক্ষে উপরোক্ত সব কাজই করা সম্ভব। কিন্তু কোন কারণে যদি দুটো কিডনিই বিকল হয়ে পড়ে তবে উপরোক্তকাজগুলো করা শরীরের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয় এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা প্রদান সম্ভব না হলে রোগী মৃতু্যবরণ করে। কিডনিবিকল মূলত দু'ধরনের হয়ে থাকে। যেমন, আকস্মিক কিডনি বিকল বা একিউট রেনাল ফেইলিউর এবং ধীর গতির কিডনি বিকল বা ক্রনিক রেনালফেইলিউর ।
আকস্মিক কিডনি বিকল বা একিউট রেনাল ফেইলিউর:
হঠাৎ কিডনি বিকল হওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে যেমন, ডায়রিয়ার কারণে অতিরিক্ত পানিশূন্যতা ঠিক সময়ে পুরণ না করা, বিশেষ কোন ওষুধসেবন যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর, কোন কারণে কিছু সময়ের জন্য কিডনিতে রক্তপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি ইত্যাদি। এ সমস্ত কারণে কিডনি বিকল হলে তাকেআমরা আকস্মিক কিডনি বিকল বা একিউট রেনাল ফেইলিউর বলি। সঠিক সময়ে কয়েক সেশন ডায়ালইসিস দিলে কিডনি কয়েকদিন পর তার স্বাভাবিককর্মক্ষমতা ফিরে পায়।
ধীর গতির কিডনি বিকল বা ক্রনিক রেনাল ফেইলিউর :
ধীর গতির কিডনি বিকল হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে প্রধানতম কারণগুলি হচ্ছে ক্রনিক গেস্নামারুলোনেফ্রাইটিস (দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা কিডনিপ্রদাহ), দীর্ঘ দিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ। এসব কারণে যখন দুটো কিডনি বিকল হয়ে যায় তখন রক্তশূন্যতাএবং ভিটামিন ডি এর অভাব পুরন ছাড়া উপরে উলেস্নখিত কিডনির অন্যান্য স্বাভাবিক কাজগুলো, বিশেষ করে শরীরের অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকরবর্জ্যপদার্থ নির্গমন এবং ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার জন্য ডায়ালাইসিস নামের বিশেষ একটি পদ্ধতির শরনাপন্ন হতে হয়।ডায়ালাইসিস মূলত দুই রকমের হেমোডায়ালাইসিস এবং পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস।
হেমোডায়ালাইসিস :
হেমোডায়ালাইসিস এমন একটি পদ্ধতি যেখানে বিশেষ মেশিনের সাহায্যে শরীরের অপরিশোধিত রক্ত শরীর থেকে বের করে এনে ডায়ালাইজার এর মধ্যেচালনা করা হয়। ডায়ালাইজার এমন একটি ছোট্ট যন্ত্রের মতো যা কৃত্রিম কিডনি রুপে কাজ করে এবং ছাকনির মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর অপ্রয়োজনীয়দ্রব্যগুলো দুরীভূত করে বিশুদ্ধ রক্ত শরীরে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়।
হেমোডায়ালাইসিস এর পুরো প্রক্রিয়া একসেশনে সাধারণত তিন থেকে চার ঘন্টা চালানো হয়। যে সমস্ত কারণে দুটো কিডনি বিকল হয়ে সারা জীবনডায়ালাইসিস এর প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন চারঘন্টা করে ডায়ালাইসিস এর পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে।
হেমোডায়ালাইসিস দেওয়ার পূর্বে রোগীর শরীরে একটি ছোট্ট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হাতের ধমনী এবং শিরার মধ্যে একটি সংযোগ করে দেয়া হয়, যাকেফিস্টুলা বলে। পরে ঐ ফিস্টুলার মধ্যে নিডল প্রবেশ করিয়ে হেমোডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে সংযোগ প্রদান করা হয়। তবে অস্ত্রোপাচারের তিন থেকেচার সপ্তাহের আগে এই ফিস্টুলা দিয়ে হিমোডায়ালাইসিস করা সম্ভব হয় না। যদি রোগীর শিরা খুব সরু থাকে এবং সে কারণে ফিস্টুলা তৈরী করা সম্ভব নাহয় সে ক্ষেত্রে ইদানিং কৃত্রিম একটি গ্রাফটের মাধ্যমে ধমনি এবং শিরার মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে দেয়া হয়। ফিস্টুলার চাইতে গ্রাফটের সুবিধা হলো অল্পকয়েকদিনের মধ্যে এটি ব্যবহার করা সম্ভব। ফিস্টুলা দিয়ে রোগীকে সারাজীবন হেমোডায়ালাইসিস করা সম্ভব যদি ফিস্টুলা কর্মক্ষম থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রআছে যখন রোগীকে হঠাৎ করে হেমোডায়ালাইসিস দেয়ার প্রয়োজন হয়, তখন ফিস্টুলা তৈরী করে নেয়ার অবকাশ থাকে না। সে ক্ষেত্রে ফিমোরাল এবংজুগুলার নামে শরীরের যে দুইটি শিরা আছে তার যে কোন একটি শিরায় বিশেষ এক ধরনের নল বা ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে তাৎক্ষনিক ভাবেহেমোডায়ালাইসিস দেয়া সম্ভব। তবে এ ধরনের ক্যাথেটার দিয়ে এক থেকে তিনসপ্তাহের বেশি হেমোডায়ালাইসিস করানো সম্ভব হয়না। এবং সে ক্ষেত্রেইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস:
হেমোডায়ালাইসস ছাড়া পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস নামক আরেকটি বিশেষ পদ্ধতিতে কৃত্রিম ভাবে কিডনির কাজ করানো সম্ভব। যার মধ্যে উন্নতবিশ্বে যেপদ্ধতিটি এখন অনুসরণ করা হচ্ছে তার নাম কন্টিনিউয়াস এম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (সিএপিডি)। এ পদ্ধতিতে একটি ছোট অস্ত্রোপচারেরমাধ্যমে পেটের মধ্যে একটি ছোট ছিদ্রের সাহায্যে একটি ক্যথেটার প্রবেশ করানো হয় এবং বাইরে একটি ব্যাগের সাহায্যে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড পেরিটোনিয়ালফ্লুইড নামক পেটের পানির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে চার থেকে ছয় ঘন্টা রেখে দেয়া হয়। পেরিটোনিয়াল মেমব্রেন নামক একটি ছাকনির সাহায্যে উপরোক্তডায়ালাইসিস ফ্লুইড এবং পেরিটোনিয়ার ফ্লুইড এর মধ্যে আদান প্রদানের মাধ্যমে শরীরের রক্ত পরিশোধিত হয় এবং চার থেকে ছয় ঘন্টা পর ডায়ালাইসিসফ্লুইড বের করে আনা হয় এবং নতুন করে আরেক ব্যাগ ফ্লুইড প্রবেশ করানো হয়। এ পদ্ধতির একটি বিশেষ সুবিধা হলো এখানে এ পদ্ধতিতে রোগীরস্বাভাবিক চলাফেরায় কোন সমস্যা হয় না। তবে এ পদ্ধতিতে যে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড ব্যবহার করা হয় তা আমাদের দেশে উৎপাদিত না হওয়ায় এ পদ্ধতিবেশ ব্যায় বহুল।
আমাদের মতো গরীব দেশে অন্য এক ধরনের পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস দেয়া হয় যে পদ্ধতিতে পেটের মধ্যে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে টানা চবি্বশ থেকেবাহাত্তর ঘন্টা পযর্ায়ক্রমে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড প্রবেশ করিয়ে আধঘন্টা থেকে একঘন্টা রেখে পুনরায় বের করে আবার নতুন ডায়ালাইসিস ফ্লুইড দেয়া হয়। টানা বাহাত্তর ঘন্টা পর ক্যাথেটার খুলে এ কার্যক্রম বন্ধ হয় । এ পদ্ধতিতে সাময়িক ভাবে রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এই পদ্ধতিকার্যকর নয়।
কিডনি বিকল হলে কিডনির স্বাভাবিক কাজকর্ম হেমোডায়ালাইসিস অথবা পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে পরিচালিত করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞচিকিৎসকের তত্ত্ব্বাবধানে এ চিকিৎসা নিয়মিত ভাবে নিলে রোগীর স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব হয়। ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রমব্যয়বহুল হওয়ায় আমাদের মতো গরীব দেশে বিশেষ করে যারা নিম্ন বা মধ্য আয়ের লোক তাদের পক্ষে এ চিকিৎসার সুযোগ নেয়ার ক্ষমতা থাকে নাঅথবা শুরু করলে ও বেশীদিন চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতাল গুলোতেহেমোডায়ালাইসিসের সুযোগ বৃদ্ধি করা, সরকারী অনুদান বাড়ানো এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে এ ধরনের সেবা মূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করে তাদেরকেও এসেবায় সম্পৃক্ত করতে পারলে হয়তো এদেশের হাজার হাজার কিডনি বিকল রোগীর জীবনে আশার আলো জাগানো সম্ভব হবে।
সাধারণ অবস্থায় একটি সুস্থ কিডনির পক্ষে উপরোক্ত সব কাজই করা সম্ভব। কিন্তু কোন কারণে যদি দুটো কিডনিই বিকল হয়ে পড়ে তবে উপরোক্তকাজগুলো করা শরীরের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয় এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা প্রদান সম্ভব না হলে রোগী মৃতু্যবরণ করে। কিডনিবিকল মূলত দু'ধরনের হয়ে থাকে। যেমন, আকস্মিক কিডনি বিকল বা একিউট রেনাল ফেইলিউর এবং ধীর গতির কিডনি বিকল বা ক্রনিক রেনালফেইলিউর ।
আকস্মিক কিডনি বিকল বা একিউট রেনাল ফেইলিউর:
হঠাৎ কিডনি বিকল হওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে যেমন, ডায়রিয়ার কারণে অতিরিক্ত পানিশূন্যতা ঠিক সময়ে পুরণ না করা, বিশেষ কোন ওষুধসেবন যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর, কোন কারণে কিছু সময়ের জন্য কিডনিতে রক্তপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি ইত্যাদি। এ সমস্ত কারণে কিডনি বিকল হলে তাকেআমরা আকস্মিক কিডনি বিকল বা একিউট রেনাল ফেইলিউর বলি। সঠিক সময়ে কয়েক সেশন ডায়ালইসিস দিলে কিডনি কয়েকদিন পর তার স্বাভাবিককর্মক্ষমতা ফিরে পায়।
ধীর গতির কিডনি বিকল বা ক্রনিক রেনাল ফেইলিউর :
ধীর গতির কিডনি বিকল হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে প্রধানতম কারণগুলি হচ্ছে ক্রনিক গেস্নামারুলোনেফ্রাইটিস (দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা কিডনিপ্রদাহ), দীর্ঘ দিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ। এসব কারণে যখন দুটো কিডনি বিকল হয়ে যায় তখন রক্তশূন্যতাএবং ভিটামিন ডি এর অভাব পুরন ছাড়া উপরে উলেস্নখিত কিডনির অন্যান্য স্বাভাবিক কাজগুলো, বিশেষ করে শরীরের অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকরবর্জ্যপদার্থ নির্গমন এবং ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার জন্য ডায়ালাইসিস নামের বিশেষ একটি পদ্ধতির শরনাপন্ন হতে হয়।ডায়ালাইসিস মূলত দুই রকমের হেমোডায়ালাইসিস এবং পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস।
হেমোডায়ালাইসিস :
হেমোডায়ালাইসিস এমন একটি পদ্ধতি যেখানে বিশেষ মেশিনের সাহায্যে শরীরের অপরিশোধিত রক্ত শরীর থেকে বের করে এনে ডায়ালাইজার এর মধ্যেচালনা করা হয়। ডায়ালাইজার এমন একটি ছোট্ট যন্ত্রের মতো যা কৃত্রিম কিডনি রুপে কাজ করে এবং ছাকনির মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর অপ্রয়োজনীয়দ্রব্যগুলো দুরীভূত করে বিশুদ্ধ রক্ত শরীরে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়।
হেমোডায়ালাইসিস এর পুরো প্রক্রিয়া একসেশনে সাধারণত তিন থেকে চার ঘন্টা চালানো হয়। যে সমস্ত কারণে দুটো কিডনি বিকল হয়ে সারা জীবনডায়ালাইসিস এর প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন চারঘন্টা করে ডায়ালাইসিস এর পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে।
হেমোডায়ালাইসিস দেওয়ার পূর্বে রোগীর শরীরে একটি ছোট্ট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হাতের ধমনী এবং শিরার মধ্যে একটি সংযোগ করে দেয়া হয়, যাকেফিস্টুলা বলে। পরে ঐ ফিস্টুলার মধ্যে নিডল প্রবেশ করিয়ে হেমোডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে সংযোগ প্রদান করা হয়। তবে অস্ত্রোপাচারের তিন থেকেচার সপ্তাহের আগে এই ফিস্টুলা দিয়ে হিমোডায়ালাইসিস করা সম্ভব হয় না। যদি রোগীর শিরা খুব সরু থাকে এবং সে কারণে ফিস্টুলা তৈরী করা সম্ভব নাহয় সে ক্ষেত্রে ইদানিং কৃত্রিম একটি গ্রাফটের মাধ্যমে ধমনি এবং শিরার মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে দেয়া হয়। ফিস্টুলার চাইতে গ্রাফটের সুবিধা হলো অল্পকয়েকদিনের মধ্যে এটি ব্যবহার করা সম্ভব। ফিস্টুলা দিয়ে রোগীকে সারাজীবন হেমোডায়ালাইসিস করা সম্ভব যদি ফিস্টুলা কর্মক্ষম থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রআছে যখন রোগীকে হঠাৎ করে হেমোডায়ালাইসিস দেয়ার প্রয়োজন হয়, তখন ফিস্টুলা তৈরী করে নেয়ার অবকাশ থাকে না। সে ক্ষেত্রে ফিমোরাল এবংজুগুলার নামে শরীরের যে দুইটি শিরা আছে তার যে কোন একটি শিরায় বিশেষ এক ধরনের নল বা ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে তাৎক্ষনিক ভাবেহেমোডায়ালাইসিস দেয়া সম্ভব। তবে এ ধরনের ক্যাথেটার দিয়ে এক থেকে তিনসপ্তাহের বেশি হেমোডায়ালাইসিস করানো সম্ভব হয়না। এবং সে ক্ষেত্রেইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস:
হেমোডায়ালাইসস ছাড়া পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস নামক আরেকটি বিশেষ পদ্ধতিতে কৃত্রিম ভাবে কিডনির কাজ করানো সম্ভব। যার মধ্যে উন্নতবিশ্বে যেপদ্ধতিটি এখন অনুসরণ করা হচ্ছে তার নাম কন্টিনিউয়াস এম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (সিএপিডি)। এ পদ্ধতিতে একটি ছোট অস্ত্রোপচারেরমাধ্যমে পেটের মধ্যে একটি ছোট ছিদ্রের সাহায্যে একটি ক্যথেটার প্রবেশ করানো হয় এবং বাইরে একটি ব্যাগের সাহায্যে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড পেরিটোনিয়ালফ্লুইড নামক পেটের পানির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে চার থেকে ছয় ঘন্টা রেখে দেয়া হয়। পেরিটোনিয়াল মেমব্রেন নামক একটি ছাকনির সাহায্যে উপরোক্তডায়ালাইসিস ফ্লুইড এবং পেরিটোনিয়ার ফ্লুইড এর মধ্যে আদান প্রদানের মাধ্যমে শরীরের রক্ত পরিশোধিত হয় এবং চার থেকে ছয় ঘন্টা পর ডায়ালাইসিসফ্লুইড বের করে আনা হয় এবং নতুন করে আরেক ব্যাগ ফ্লুইড প্রবেশ করানো হয়। এ পদ্ধতির একটি বিশেষ সুবিধা হলো এখানে এ পদ্ধতিতে রোগীরস্বাভাবিক চলাফেরায় কোন সমস্যা হয় না। তবে এ পদ্ধতিতে যে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড ব্যবহার করা হয় তা আমাদের দেশে উৎপাদিত না হওয়ায় এ পদ্ধতিবেশ ব্যায় বহুল।
আমাদের মতো গরীব দেশে অন্য এক ধরনের পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস দেয়া হয় যে পদ্ধতিতে পেটের মধ্যে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে টানা চবি্বশ থেকেবাহাত্তর ঘন্টা পযর্ায়ক্রমে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড প্রবেশ করিয়ে আধঘন্টা থেকে একঘন্টা রেখে পুনরায় বের করে আবার নতুন ডায়ালাইসিস ফ্লুইড দেয়া হয়। টানা বাহাত্তর ঘন্টা পর ক্যাথেটার খুলে এ কার্যক্রম বন্ধ হয় । এ পদ্ধতিতে সাময়িক ভাবে রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এই পদ্ধতিকার্যকর নয়।
কিডনি বিকল হলে কিডনির স্বাভাবিক কাজকর্ম হেমোডায়ালাইসিস অথবা পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে পরিচালিত করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞচিকিৎসকের তত্ত্ব্বাবধানে এ চিকিৎসা নিয়মিত ভাবে নিলে রোগীর স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব হয়। ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রমব্যয়বহুল হওয়ায় আমাদের মতো গরীব দেশে বিশেষ করে যারা নিম্ন বা মধ্য আয়ের লোক তাদের পক্ষে এ চিকিৎসার সুযোগ নেয়ার ক্ষমতা থাকে নাঅথবা শুরু করলে ও বেশীদিন চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতাল গুলোতেহেমোডায়ালাইসিসের সুযোগ বৃদ্ধি করা, সরকারী অনুদান বাড়ানো এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে এ ধরনের সেবা মূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করে তাদেরকেও এসেবায় সম্পৃক্ত করতে পারলে হয়তো এদেশের হাজার হাজার কিডনি বিকল রোগীর জীবনে আশার আলো জাগানো সম্ভব হবে।
হ ডাঃ রানা মোকাররম হোসেন,
সহযোগী অধ্যাপক, কিডনী রোগ বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
চেম্বার ঃ আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
চেম্বার ঃ আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
No comments:
Post a Comment