Search This Blog

Thursday, April 21, 2011

প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমনসেবাযন্ত্রণাহীন মৃত্যুই যখন উদ্দেশ্য


ডা. জিয়াউল হক

ক্যান্সার এইডসের মতো অনিরাময়যোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীর ডাক্তারের দৃষ্টিতে আর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই_তাদের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণায়। বাড়িঘর বা হাসপাতালে যন্ত্রণা নিরাময়ে প্রয়োজনীয় চিকিসাটুকু থেকে তারা বঞ্চিত হয়। কষ্ট এতটাই বেশি যে বেঁচে থাকার চেয়ে অনেকেই তখন মৃত্যুকেই সহজ মনে করে। অনিরাময়যোগ্য রোগীর শেষ দিনগুলো যন্ত্রণাবিহীন করে কষ্টমুক্ত মৃত্যু নিশ্চিত করতে কাজ করে এই 'প্যালিয়েটিভ কেয়ার' বা 'প্রশমনসেবা'

প্রশমন সেবা
প্যালিয়েটিভ কেয়ার অন্যান্য চিকিসাসেবাকে বাদ দিয়ে নয়, এটি অন্য সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে কাজ করে। এটি এমন এক সেবা, যাতে নিরাময় অযোগ্য রোগীকে দ্রুততার সঙ্গে লক্ষণাদি শনাক্ত করে যথাযথ মূল্যায়ন চিকিসার মাধ্যমে আক্রান্ত তার তার পরিবারের জীবনমান উন্নত করা।
-
নিরাময় অযোগ্য রোগী এবং তার পরিবারকে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত শারীরিক, মানসিক সঠিক পথনির্দেশনা প্রদান করা।
-
রোগীদের ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
-
জীবনকে কোনোভাবে দীর্ঘায়িত বা সংক্ষিপ্ত করা নয় বরং জীবনের গুণগত মান উন্নয়ন করা।
-
জীবনের মতো মৃত্যুকেও স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে সাহায্য করা।
-
এমন একটি সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা, যাতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত সময় কাটে যন্ত্রণাবিহীনভাবে।
-
রোগীর পরিবারকে খাপ খেয়ে নিতে সাহায্য করা।
-
রোগী পরিবারের চাহিদা পুরণে টিম-ভিত্তিক কাজ করা।
-
রোগের প্রাথমিক অবস্থায়ও অন্যান্য চিকিসা যেমন কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপির পাশাপাশি এটি চালানো যায়।
-
রোগী তার পরিবারের সংকটকালে চিকিসাব্যবস্থা এবং সমাজের পক্ষ থেকে সহানুভূতির সঙ্গে অংশীদার হতে চেষ্টা করা।
-
আগ্রহী যেকোনো মানুষের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যাতে কেউ চাইলে তার বাড়িতে থাকা এমন রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সেবা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে।
-
চিকিসক, নার্স সমাজের অন্যদের সহযোগিতায় প্যালিয়েটিভ কার্যক্রমের একটি সমন্বিত কার্যক্রম গড়ে তোলা।

বিএসএমএমইউর প্রশমনসেবা প্রকল্পের সমন্বয়ক অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমেদের মতে, শারীরিক মানসিক শান্তি নিশ্চিত করতেই সার্ভিস। এমনকি রোগীদের শেষ ইচ্ছাও যথাসাধ্য পূরণ করার চেষ্টা করা হয় সেবায়। যারা ভাগ্যের কারণে সমাজ থেকে আলাদা হয়ে গেছে, তাদের শেষ মুহূর্তগুলো একটু শান্তিতে কাটানোর জন্যই সার্ভিস।

যাদের জন্য সেবা
রোগীরা যেহেতু জানতে পারে সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই তার মানসিক কষ্ট অনেক, শারীরিক কষ্ট তো আছেই। এসব রোগী শারীরিকভাবে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সাধারণভাবে নিম্নোক্ত রোগগুলোর ক্ষেত্রে প্রশমনসেবা প্রয়োজন।
-
নিরাময় অযোগ্য ক্যান্সার,
-
এইডস,
-
শেষ পর্যায়ের কিডনি বা হার্ট ফেইলিউর,
-
শেষ পর্যায়ের ফুসফুসের রোগ,
-
ক্রমবর্ধমান স্নায়ু মাংসপেশির রোগ,
-
স্ট্রোকে দীর্ঘমেয়াদি অচেতন অর্ধচেতন অথবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী এবং
-
জীবন সীমিতকারী অন্যান্য প্রান্তিক রোগ।

বাংলাদেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ার
বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণঘাতী ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং আনুমানিক সমানসংখ্যক মানুষ এইডস, স্নায়ুরোগ, প্রান্তিক কিডনি হৃদরোগ, ফুসফুসের অন্যান্য অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৬০ হাজার ব্যক্তির প্রশমনসেবা প্রয়োজন।
বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে প্রশমনসেবা কার্যক্রম চললেও বাংলাদেশে এর উদ্যোগ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ২০০৬ সালে এর যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। আফযালুন্নেছা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় প্যালিয়েটিভ কেয়ার বাংলাদেশ নামে একটি প্রজেক্টের অধীনে সেবা কার্যক্রম চলছে। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। বর্তমানে এখানে বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ এবং সীমিত পরিসরে সার্ভিস চালু আছে। আশিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের প্রশমনসেবা দিয়ে থাকে। স্যার উইলিয়াম বেভারেজ ফাউন্ডেশন ঢাকা শহরের কিছু এলাকায় সীমিত পরিসরে হোম সার্ভিস দিয়ে থাকে। ছাড়া জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান সীমিতভাবে সেবা দিয়ে থাকে।
সেবা দেওয়ার দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তির অভাব রয়েছে। ধরনের চিকিসা দেন এমন চিকিসক আছেন মাত্র ১২ জন। চিকিসক নার্সের পাশাপাশি কমিউনিটি থেকেও আগ্রহী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
লেখক : রেসিডেন্ট
বিএসএমএমইউ, ঢাকা

m~Z&ª: দৈনিক কালেরকন্ঠ(29/01/2011)

No comments:

Post a Comment