Search This Blog

Thursday, April 21, 2011

অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট যখন

অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ

অনেক বক্ষব্যাধিই আছে, যেখানে একটু নড়াচড়া বা হালকা পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। বক্ষব্যাধিগুলোর মধ্যে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং এমফাইসিমা প্রণিধানযোগ্য। একজন বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন নানা কারণে। এসব কারণের একটি হলো ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস। রোগ সাধারণত পুরুষেরই বেশি হয় এবং মধ্য-বয়সের পর থেকেই তা প্রকাশ পেতে থাকে। ধূমপায়ীদের মধ্যে রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ধূমপানকে তাই রোগের একটি প্রধান কারণ বলা হয়। ধূমপান ছাড়াও ধুলা, গাড়ির কালো ধোঁয়া, কলকারখানার বিষাক্ত পরিবেশ এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ রোগ সৃষ্টিতে সহায়ক। সাধারণত কোনো ব্যক্তি বছরে অন্তত তিন মাস ধরে কাশিতে ভুগতে থাকলে এবং এভাবে দুই বছরের অধিক হলে আমরা রোগীকে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের রোগী বলে ধরে নিই। রোগে আক্রান্তদের শব্দ করে কাশি হয়। সেই সঙ্গে শ্লেষ্মা বা কফ থাকে।
ব্রঙ্কাইটিস জীবাণু দিয়ে হয়। রোগের লক্ষণ হলো, কাশির সঙ্গে অন্তত তিন মাস ধরে শ্লেষ্মা হয়ে থাকে। প্রতিবছরই একই রোগীর রোগ হতে পারে। আরেকটি রোগ এমফাইসিমা। এটি ভয়ানক শ্বাসকষ্টজনিত বক্ষরোগ। এমফাইসিমা রোগটি মোটামুটিভাবে প্রচলিত একটি দুরারোগ্য বক্ষব্যাধি; যেখানে সমস্যা মানে কফ-কাশি আর শ্বাসকষ্ট। যখন ফুসফুসের কাঠামোর অভ্যন্তরে বাতাস জমে ফুলে ওঠে, তখন ফুসফুসের ভেতরের অংশগুলো নষ্ট অক্ষম হয়ে স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ হারিয়ে অকার্যকর হয়ে যায়। রোগ এক দিনে তৈরি হয় না। মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে ফুসফুসের মধ্যে তৈরি হয়। এমফাইসিমা অনেক ক্ষেত্রে নিজে নিজেই দেখা দিতে পারে। অন্যান্য বক্ষব্যাধির মতো ধূমপানের কারণে এটি হয়। বহুদিনের পুরনো ধূমপায়ীর ফুসফুসে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের সঙ্গে এমফাইসিমা দেখা দিয়ে থাকে। তবে ধূমপানের সঙ্গে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্পর্ক নিবিড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পরিবেশদূষণও রোগের জন্য দায়ী। যদি এমফাইসিমা অন্য কোনো রোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকে অর্থাযদি ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং হাঁপানির জটিলতার কারণে না হয়ে থাকে, তবে প্রথম দিক থেকেই ব্যাপক শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং রোগী একটু চলাফেরা করলেই আর দম পায় না। পরের দিকে শ্বাসতন্ত্র এবং ƒদযন্ত্রের ব্যর্থতার জন্য ফেইলিওর দেখা দেয় এবং শরীরের রং গোলাপি হয়ে যায়। অপরদিকে এমফাইসিমা যদি ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, তবে প্রথমদিকে তেমন শ্বাসকষ্ট থাকে না। পরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ƒদযন্ত্রের ডান দিকের অংশ অকার্যকর হয়ে হার্ট ফেইলিওর দেখা দেয়। পায়ে পানি আসে এবং রোগীর শরীর নীলাভ হতে থাকে।
এসব রোগ নির্ণয়ে বুকের এক্স-রে একটি নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা। অনেক ক্ষেত্রে পালমোনারি ফাংশন টেস্টের প্রয়োজন পড়ে। এমফাইসিমা একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। তাই শ্বাসকষ্টকে অবশ্যই ওষুধের মাধ্যমে কমিয়ে রোগীকে প্রশান্তিময় শ্বাস উপহার দিতে হবে। যদি জীবাণু সংক্রমণের জন্য কফ পেকে হলুদ হয়ে যায়, তবে এক কোর্স ভালো এবং কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দিতে হব। ধূমপান যেহেতু এই রোগের মুখ্য কারণ, তাই ধূমপান ছাড়তে হবে। গাড়ির কালো ধোঁয়া, মিল-কারখানার বিষাক্ত কালো জ্যাম থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি বংশগত কারণের জন্য এই রোগ হয়ে থাকে, তবে তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করে রোগীকে চিকিসা দিতে হবে।

লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিসক
ইকবাল চেস্ট সেন্টার
মগবাজার, ঢাকা

m~Z&ª: দৈনিক কালেরকন্ঠ(15/01/2011)

1 comment:

  1. স্যার,
    এক্ষেত্রে আমি কি কি ঔষধ ব্যাবহার করতে পারি ? আমার বয়স ৭০,

    ReplyDelete