Search This Blog

Thursday, April 21, 2011

শীতে বাড়ে অ্যাজমা

শীতে অনেক অসুখ হয়_এর মধ্যে অ্যাজমা বেশি হয়। পরামর্শ দিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম রেসপিরেটরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল। লিখেছেন ডা. এস এম জি সাকলায়েন

গ্রিক শব্দ অ্যাজমার অর্থ হা করে শ্বাস নেওয়া। হিপোক্রাটিস সর্বপ্রথম শব্দটি ব্যবহার করেন। এটি একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ, কিন্তু কখনোই একেবারে নির্মূল করা যায় না। সারা বিশ্বে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ রোগে ভুগছে অ্যাজমা রোগীর শ্বাসনালি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। ফলে কোনো উত্তেজক পদার্থ যেমন_ঘরের ধুলা, ঝুল, ফুলের রেণু বা পশুপাখির সংস্পর্শে এলে এদের শ্বাসনালি হঠাসংকুচিত হয়ে তীব্র শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে।

যে কারণে হয়
অ্যাজমা শ্বাসনালির প্রদাহজনিত রোগ। প্রদাহের কারণে শ্বাসনালির সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। ফলে ঘন ঘন কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা চাপ বেড়ে যায়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে বংশগত কারণে এবং পরিবেশের প্রভাবে রোগ হয়ে থাকে। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। যাদের শ্বাসনালি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল, তাদের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

উপসর্গ
-
শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
-
বুকের ভেতর বাঁশির মতো আওয়াজ হওয়া
-
বুকভরে শ্বাস নিতে না পারা
-
দম বন্ধ ভাব
-
ঘন ঘন কাশিতে আক্রান্ত হওয়া
-
অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা

অ্যালার্জেন কী
পরিবেশের যেসব উপাদান অ্যাজমার উদ্রেক করে, তাদের অ্যালার্জেন বলে। সাধারণ অ্যালার্জেনগুলো এখানে তুলে ধরা হলো
-
ধুলাবালি, বিশেষ করে ঘরের ধুলাবালি
-
ফুলের রেণু
-
পোষা প্রাণী
-
পশু-পাখির লোম
-
ধূমপান
-
আবেগ বা টেনশন
-
পোকামাকড়
-
ঠাণ্ডা আবহাওয়া
-
কিছু খাবারদাবার যেমন_বেগুন, পুঁইশাক, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ
-
কিছু ব্যথানাশক ওষুধ
এসব অ্যালার্জেন সবার অ্যাজমা তৈরি করবে_ এমন কথা নেই। একেকজনের ক্ষেত্রে অ্যালার্জেন একেক রকম হয়।

চিকিসা
অ্যাজমার চিকিসায় নিদির্ষ্ট কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। শুধু রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। এর চিকিসায় দু্ই ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। উপশমকারী ওষুধ এবং প্রতিরোধকারী ওষুধ।
উপশমকারী ওষুধ হিসেবে সালবিউটামল গ্রুপের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। বাজারে সালটোলিন, ভেনটোলিন, অ্যাজমাসল ইত্যাদি নামে এসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়। সালবিউটামল শ্বাসনালি প্রসারিত করে শ্বাসকষ্ট কমিয়ে দেয়। এসব ওষুধ ট্যাবলেট বা ইনহেলার হিসেবে পাওয়া যায়। ট্যাবলেট ব্যবহারের চেয়ে ইনহেলার ব্যবহার করা ভালো। এতে ওষুধের কার্যকারিতা বাড়ে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমে।
অপরদিকে অসুখ প্রতিরোধে স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ ব্যবহৃত হয়। বাজারে এসব ওষুধ বিকোমেট, বেঙ্েিটান, টিকামেট, সেরেটাইড ইভোহেলার, ইকোহেলার ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। স্টেরয়েড শ্বাসনালির প্রদাহ কমায়, সংবেদনশীলতা কমিয়ে অ্যাজমার মাত্রা হ্রাস করে।
ছাড়া অ্যান্টি হিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ যেমন_অ্যালাট্রোল, টোফেন, লোরাটিন, ওরাডিন ইত্যাদি ওষুধও দেওয়া যেতে পারে।

অ্যাজমা হলে
অ্যাজমা মানেই সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকা নয়। অ্যাজমা রোগীরাও আর দশজন মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। তবে তাকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সর্বাবস্থায় অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। কখনো ধূমপান করা যাবে না, ধূমপায়ীর সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না। একসঙ্গে গাদাগাদি করে ঘুমানো যাবে না। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কাজকর্ম জমিয়ে রাখবেন না। টেনশন এড়ানোর চেষ্টা করবেন। ফুল ফুলের বাগান থেকে দূরে থাকবেন। কোনো অবস্থায়ই ঠাণ্ডা লাগাবেন না। সব সময় প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে রাখবেন।

শিশুদের অ্যাজমা
অ্যাজমা রোগে বড় কিংবা ছোট যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। তবে শিশুরা আক্রান্ত হলে এটা প্রতিরোধ করা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা অ্যাজমা রোগীদের যে ধরনের নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হয়, শিশুদের পক্ষে তা মেনে চলা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা সে অনুযায়ী চিকিসা নেওয়া উচিত। যেসব শিশু প্রায়ই সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়, ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট হয়, গায়ে লাল লাল ্যাশ ওঠে, তাদের দ্রুত চিকিসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিকভাবে চিকিসা করা উচিত। যেসব শিশুর মা-বাবা অ্যাজমা রোগী বা অ্যালার্জিকপ্রবণ, তাদের আগেভাগেই একজন অ্যাজমা বিশেষজ্ঞ বা ইমোনোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিছু ভুল ধারণা
অনেকে মনে করেন একবার ইনহেলার নিলে সারা জীবন ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। তাই তাঁরা ইনহেলার ব্যবহার করতে চান না। এটা ঠিক নয়। আগেই বলা হয়েছে, ট্যাবলেটের চেয়ে ইনহেলার অনেক বেশি ভালো উপকারী। তা ছাড়া ইনহেলার শেষ চিকিসাও নয়। অনেক মা-বাবা শিশুর সামান্য একটু শ্বাসকষ্ট হলে নেবুলাইজার ব্যবহার করেন। এটা ঠিক নয়, সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় না করে নেবুলাইজার নেওয়া ঠিক নয়। অ্যাজমা হয়েছে মনে করে অনেকে সব ধরনের খাবারদাবার বন্ধ করে দেন। এটাও ঠিক নয়। কেননা একেকজনের একেক খাবারে অ্যাজমা হয়ে থাকে। যে খাবারে অ্যালার্জি হয়, ঠিক সে খাবারটিই বন্ধ করা উচিত।
ইনহেলার হলো অ্যাজমা রোগীদের ওষুধ গ্রহণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। অ্যাজমা অ্যাটাক হলে এটি বেশি কাজে লাগে।তবে সঠিক নিয়মে ইনহেলার গ্রহণ জরুরি। জন্য আপনার চিকিসকের সাহায্য নিন।

অ্যাজমা প্রতিরোধ
-
অ্যাজমা প্রতিরোধের প্রথম কথা হলো অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা
-
ঘরবাড়ি ধুলামুক্ত রাখা।
-
মেঝে বা ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করা
-
ঘরে কার্পেট না বিছানো ভালো, কারণ কার্পেটে ধুলাবালি জমে থাকে; ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ধুলো কম ছড়ায়
-
শীতকালে যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সে জন্য গরম পানি ব্যবহার করুন
-
ধূমপান পরিহার করুন
-
যেসব খাবারে অ্যালার্জি হয়, তা পরিহার করুন
-
বালিশ, তোশকে তুলার পরিবর্তে স্পঞ্জ ব্যবহার করা ভালো
-
অ্যাজমা প্রতিরোধী ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করুন। রোগ ভালো হয়েছে মনে হলেই ওষুধ বন্ধ করবেন না।
-
মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন
-
পেশাগত কারণে (যেমন_ধুলোবালিযুক্ত স্থানে যাঁদের কাজ করতে হয়) অ্যাজমা হয়ে থাকলে পেশা পরিবর্তন করুন
-
খেলাধুলা করতে শ্বাসকষ্ট হলে তা এড়িয়ে চলুন
-
পোষ্য প্রাণীকে নিয়মিত গোসল করান, কারণ এর লোম থেকে অ্যাজমা হতে পারে
-
পরাগরেণু পরিহার করুন।
-
সুগন্ধি বা মশার কয়েল এড়িয়ে চলুন
-
ঘরের ধুলার তুলনায় বাইরের ধুলা ভালো। কেননা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী মাইট ঘরের ধুলায় বেশি জমে

m~Z&ª: দৈনিক কালেরকন্ঠ(08/01/2011)

No comments:

Post a Comment