Search This Blog

Friday, November 4, 2011

ডায়াবেটিস ও খাদ্য

সাধারণ স্বাস্থ্য রক্ষায় যেমন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি ডায়াবেটিসের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয় না। তবে এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে খাদ্যের ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা জরুরী। তিনটি বিষয় মনে রাখতে পারলে এই রোগটিকে আয়ত্বে আনা কোন ব্যাপার নয়। প্রথমত: নিষিদ্ধ খাবার বর্জন। দ্বিতীয়ত: পরিমাণ মতো খাবার গ্রহণ। তৃতীয়ত: প্রতি ঘন্টা পর পর খাবার খেতে হবে।

নিষিদ্ধ
খাবারগুলো হলো:

চিনি
, গুড়, মধু, গস্নুকোজ, খেজুরের রস, কেক, পেস্ট্রি, জ্যাম, জেলী, সিরাপ, মিষ্টি বিস্কুট, মিষ্টি, হালুয়া, কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম, মিষ্টি দই ইত্যাদি।

পরিমাণ
মতো খাবার গ্রহণ:

প্রতিটি
ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের পরিমাণ পৃথক হয়ে থাকে। পরিবারে এক জনের ডায়াবেটিস হলে তাকে যে পরিমাণ খাবার নির্ধারণ করে দেয়া হয়, সেই পরিমাণ খাবার অন্যদের জন্য নয়। কারণ যদি খাবারের পরিমাণ বেশি হয় তবে রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা বেড়ে যাবে। আর যদি কম হয় তাহলে গস্নুকোজের মাত্রা কমে যাবে। এই কারণে যার জন্য যে পরিমাণের খাবার নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় তাই খেতে হবে।

সময়
মতো খাবার খেতে হবে:

ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সময় ঠিক রাখা খুবই জরুরী। একেক দিন একেক সময়ে খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে এবং প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা পর পর খেতে হবে। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকা ডায়াবেটিসের জন্য খুবই বিপজ্জনক। এতে বিপাক ক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে এক কিটোসিসের মত জটিলতা দেখা যায়। এদিকে দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর পর খেলে রক্ত শর্করার মাত্রা কমানো যায় না।

খাবার
হবে ধরনের:

চিনি
-মিষ্টি, মধু বাদ দিতে হবে, ভাত-রুটি-আলু পরিমাণ মতো, পাতা জাতীয় পানসে সবজি ইচ্ছামত। টক জাতীয় ফল ইচ্ছামত। তবে ডায়াবেটিস বা রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মিষ্টি ফল না খাওয়াই উত্তম।

শর্করা
জাতীয় খাদ্য:

অন্যান্য
স্বাভাবিক লোকের মতই শর্করা জাতীয় খাবার দৈনিক ৫০-৬০ ভাগ দিতে হবে। ধরণের খাবার শরীরে শক্তি যোগায়। শর্করা প্রধানত: দুই প্রকার। চিনিযুক্ত শর্করা শ্বেতসারযুক্ত শর্করা। সকল শর্করাই শোষিত হয়ে দেহে গস্নুকোজে রূপান্তরিত হয়। তবে সহজ শর্করা যেমন- চিনি, গুড়-গস্নুকোজ এগুলো খাওয়া মাত্র সরাসরি রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা বাড়ায় এবং শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য ধীরে ধীরে বাড়ায়। কারণেই চিনি-গুড় একেবারেই নিষেধ করা হয় এবং শ্বেতসার অর্থা ভাত-রুটি, শস্য জাতীয় খাবার সীমিত পরিমাণে খেতে বলা হয়।

শর্করা
জাতীয় খাবার হলো:

রুটি
, ভাত, আলু, বিস্কুট, নডুলস, চালের গুড়া, পরিকা, ভূট্টা, সাগু, বালি, সুজি, চিড়া, মুড়ি, খই, চিনি-গুড়, গস্নুকোজ, মধু, সেমাই ইত্যাদি।

আমিষ
জাতীয় খাদ্য:

আমিষ
প্রধানত: দু'ধরণের হয়ে থাকে। প্রাণীজ আমিষ উদ্ভিজ আমিষ। সাধারণত: প্রাণীজ আমিষের চাইতে উদ্ভিজ আমিষের গুণগত মান কম। তবে উভয় প্রকার আমিষই পরিপাক হয়ে এমাইনো এসিডরূপে রক্তে শোষিত হয়। খাদ্যের মোট ক্যালরির ২০-৩০ ভাগ আমিষ জাতীয় খাবার থেকে আসা উচিত। আমিষ শর্করার মতো রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা বাড়ায় না এবং চর্বির মতো অধিক ক্যালরি পন্ন করে না। তবে এটা শরীর গঠন, বৃদ্ধি ক্ষয়পূরণ করে দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে দেয়। কারণে ডায়াবেটিস রোগীদেরও আমিষ জাতীয় খাদ্য স্বাভাবিক লোকের মতই গ্রহণ করতে হবে। আমিষ জাতীয় খাবার হলো- ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ডাল, বাদাম, সীমের বিচি, সয়াবিন ইত্যাদি।

চর্বি
জাতীয় খাদ্য:

সারাদিনের
খাবারের মোট ক্যালরির ২০-৩০ ভাগ আসা উচিত চর্বি জাতীয় খাদ্য থেকে। তবে সম্পৃক্ত চর্বি যেমন-ঘি, ডালডা, এবং মাংসের চর্বি, যতটা সম্ভব পরিহার করা উচিত। কারণ সম্পৃক্ত চর্বিতে দেহের রক্তে কোলেস্টেরল ট্রাইগস্নাইসেরাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের সম্পৃক্ত চর্বি যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত। কারণ তারা অন্যদের তুলনায় সহজেই হূদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। রান্নায় সয়াবিন তেল, কর্ণতেল, সূর্যমুখীর তেল, জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করাই উত্তম।

খাদ্যের
অাঁশ:

খাদ্যের
অাঁশ দেরীতে হজম হয় বলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহায়ক। আবার পরিমাণের অতিরিক্ত অাঁশ পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করে। পেটে ব্যথা হয়, পেট ফেঁপে যায় পাতলা পায়খানা হয়। সেজন্য যাদের গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা আছে এবং যাদের আলসার আছে তাদের এই জাতীয় খাবার বাদ দেয়া উচিত। অাঁশ জাতীয় খাবার হলো- ভূষিযুক্ত রুটি, লালচাল, অাঁশযুক্ত সবজি খোসা সহ ফল।

সব
শেষে বলা যায়, যেহেতু ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ সেজন্য প্রতিটি রোগীরই আত্মসচেতনতা প্রয়োজন। বলা হয়, একজন নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস সম্পন্ন লোক অনেক বেশি ভাল, ডায়াবেটিস নাই এমন একজন লোকের চাইতে। কারণ তিনি শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন করেন। এবং সব সময় চিকিসকের তত্ত্বাবধানে থাকেন।



আখতারুন
নাহার আলো

প্রধান
পুষ্টি কর্মকতা

বারডেম
, ঢাকা

সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক (29/01/2011)


No comments:

Post a Comment