গাজর খুব পুষ্টিকর শীতকালীন একটি সবজি, যদিও এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। এর উৎপত্তি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। গাজর চিনি, ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসসমৃদ্ধ। এর দুটি স্পষ্ট জাত রয়েছে_একটি দেশীয়, অন্যটি ইউরোপীয়। লাল গাজর সবচেয়ে ভালো।
গাজরের যত গুণ
গাজরে প্রচুর ক্যারোটিন রয়েছে। এ ছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও শ্বেতসার বিদ্যমান। তরকারি ও সালাদ হিসেবে গাজর খাওয়া যায়। গাজরের হালুয়া অনেকের প্রিয় খাবার।
প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে যেসব উপাদান থাকে তা হলো_
আমিষ ১.২ গ্রাম, শর্করা ১২.৭ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৯ গ্রাম, ভিটামিন-এ ৮৩৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন-বি-১ ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি-২ ০.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ১৫ মিলিগ্রাম, ফলিক এসিড ১৪ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, লৌহ ২.২ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৮২৮৫ মাইক্রোগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪১ কিলোক্যালরি (১৭৩ কিলোজুল), আঁশ ৩.০ গ্রাম।
উপকারিতা
- গাজরে লুটিনজাতীয় অ্যান্টি-অঙ্েিডন্ট আছে। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রতিদিন মধ্যম আকৃতির গাজর খেলে ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ হ্রাস করে।
- রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এটি হার্টস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ হ্রাস করে।
- গাজর ভিটামিন-এ-তে ভরপুর। নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে এবং অন্ধত্ব ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চোখের রোগ প্রতিরোধ করে।
- গাজর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ক্রিমি নাশে গাজর কার্যকর।
- মানুষের কোষের ডিএনএতে ক্ষতির কারণে বেশ কিছু ক্রনিক অসুখ শরীরে তৈরি হয়। গাজরে থাকা ক্যারোটিনয়েডসগুলো (বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন ও লাইকোপেন) এই ক্ষতি কমিয়ে দিতে পারে এবং শরীরে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করতে পারে এবং বয়সজনিত বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
- অ্যাজমা, এমফাইজেমাসহ ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।
- গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত গাজরের জুস খেলে শিশুর জণ্ডিস হওয়ার ঝুঁকি কমে।
ত্বকের খসখসে ভাব কমায়। ব্রণ, সোরিয়াসিসসহ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে।
- গাজর শিশুদের রিকেট ও টিটানি রোগ প্রতিরোধ করে। গাজরের রস খাওয়ালে শিশুদের হজমে সুবিধা হয়।
- রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
সতর্কতা
গাজর রান্না করে খাওয়ার চেয়ে কাঁচা খাওয়া সবচেয়ে ভালো। কারণ রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। কাঁচা গাজরে পুষ্টি উপাদাগুলো বিশেষ করে ভিটামিন-বি-১ এবং ভিটামিন-সি অক্ষুণ্ন থাকে এবং দেহের কাজে লাগে বেশি।
ডা. জিয়াউল হক
তথ্য সহায়তা : তৃপ্তি চৌধুরী
পুষ্টিবিদ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা
No comments:
Post a Comment