কোল্ড ভাইরাস, রাইনো ভাইরাস, হতেও পারে। হতেও পারে ফ্লু ভাইরাস। ইনফ্লেুয়েঞ্জা টাইপ-এ তফাৎ বের করা কঠিন বটে। ফ্লু আসে দ্রুত, বেশ প্রবল হয়ে। মনে হবে যে বড় বিপর্যস্ত, রুগ্ন। ফ্লু হতে পারে। ফ্লুর উপসর্গ যেমন গলা খুসখুস, জ্বর, মাথাধরা, পেশিমূল, বুকে কনজেশসন, কফ ও কাশ। কফ আসে হঠাৎ করে এবং ঠান্ডা সর্দির চেয়ে প্রবলভাবে। নাক দিয়ে পানি ঝরে, বন্ধ হয় নাক। ফ্লু উপসর্গ সাধারণত: দু'পাঁচ দিনে ভালো হয়ে যায়। তবে এরপর সপ্তাহ খানেকও বেশি শরীর বেশ কাহিল থাকে। ঠাণ্ডা সর্দি আসে ক্রমে ক্রমে, থাকে এক সপ্তাহ প্রায়।
০ বর্তমানের ফ্লু টিকা সুরক্ষা দেয় সোয়াইন ও সাধারণ ঋতুকালীন ফ্লুর বিরুদ্ধে। এদুটোর মধ্যে উপসর্গ কিছু দেখা যায়, যা সচরাচর যেমন কফ, গলা ব্যথা, জ্বর ও শরীরে ব্যথা। তবে সোয়াইনফ্লুর অনেক রোগীর হয়ে থাকে পেটের সমস্যা, বমি বা তরল মল। আর যদি হয় সাধারণ ফ্লু। ঠান্ডা লাগলে অনেকের সামান্য জ্বর হয়। অনেকের তাও হয় না। ফ্লু হলে জ্বর হয়, উঠে ১০০-১০২ ডিগ্রী বা বেশি। শিশুদের ফ্লু হলে জ্বর হয় আরো বেশি। অবশ্য ঠাণ্ডা সর্দি হলে শিশুদের জ্বর হয় সচরাচর।
০ ফ্লু হলে ক্লান্তি থেকে যায় কয়েক সপ্তাহ। ফ্লু হলে শরীরে খুব ক্লান্তি, ব্যথা বেদনা হয়। তা থেকে যায় মাস খানে, বয়স্কদের আরও বেশি দিন, যাদের ক্রনিক রোগ ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এদের আরও বেশি দিন। ঠান্ডা সর্দি হলে শরীর খারাপ থাকে মাত্র ক'দিন।
০ ঠান্ডা ও ফ্লু থেকে হতে পারে মাথা ধরা। তবে ঠান্ডা লাগার মাথা ধরা ফ্লুর মত অত প্রবল নয়।
০ কফ: ফ্লু ও ঠান্ডা দুটোতেই হতে পারে। কারণ দুটো শ্বাসযন্ত্রের রোগ। বায়ুপথে হয় বিপর্যস্ত, তাই কফ হয়। ফ্লুর জটিলতা থেকে হতে পারে নিউমোনিয়া। কফ অটল হয়ে থাকলে, জ্বর ১০২ ডিগ্রীর বেশি, শীত শীত লাগে, কাপুনী থাকে, শ্বাসকষ্ট, কাশতে কাশতে বুক ব্যথা, সবুজ হলুদ বর্ণ কফ।
০ কানের ব্যথা হতে পারে ফ্লু বা ঠান্ডার জন্য। কারণ এতে ইস্টাটিয়ান নালী যা গলার সঙ্গে মধ্যকর্নকে সংযুক্ত করে, এর উত্তেজনা ঘটতে পারে। এ থেকে ভোঁতা বা জ্বলুনি ব্যথা হতে পারে। এসব চলেও যায় নিজে নিজে। তবে শরীর সুস্থ হবার পরও ব্যথা থেকে গেলে, অথবা হঠাৎ প্রবল ব্যথা হলে ডাক্তার দেখানো উচিত। হয়ত কানে সংক্রমণ হলে, চিকিৎসা তো লাগবে।
০ ঠান্ডা কখনও শুরু হয় গলা ব্যথা দিয়ে। দু একদিন গলা ব্যথা এরপর ঠান্ডা। নাক দিয়ে পানি পড়া, নাকবন্ধ। ফ্লু হলে গলা খুস খুস হয় তবে সঙ্গে প্রবল ক্লান্তি ও অন্যান্য উপসর্গ হয়।
০ খুব জ্বর, ক্লান্তি বা শরীর ব্যথা নেই, কিন্তু নাক বন্ধ-ঠান্ডা লেগেছে। তবে ফ্লু রোগী অনেকে নাক বন্ধ ও হাচির কথাও বলেন। কোল্ড ও ফ্লু দুটোতেই সাইনাস সংক্রমণ হতে পারে। চিবুকের হাড়ে প্রবল ব্যথা, কপালে এবং নাকেও। মাথা হঠাৎ ঘোরালে, নাড়ালে বেশ ব্যথা হয়। চিকিৎসা নিতে হয়।
০ ফ্লু সোয়ার টেস্ট। ফ্লু না ঠান্ডা তা জানার জন্য। নাকের বা গলদেশের সোয়ার নিয়ে টেস্ট করে বলা যায়। ফ্লু হলে চিকিৎসা দেবেন ডাক্তার। উপসর্গের জন্যও। আর ঠান্ডা লাগলেও সহজ ওষুধ দিবে ডাক্তার। ঠান্ডা সর্দিও ফ্লু।
প্রতিরোধ: প্রতিরোধের উপায় হলো হাত ধোয়া। হাত ওয়াস, ভালো করে সাবান পানি দিয়ে। ২০ সেকেন্ড হাত কচলানো, আঙ্গুলের ফাক, নখ সব। ধুয়ে শুকনো করে নেয়া। এলকোহল সেনিটাইজারেও কাজ হয়। ঠান্ডা ফ্লুর সিজনে হাত ধোবেন বার বার। কফ, কাশ, হাচির পর তো বটেই। টিসুূ নেই ? হাতের বদলে কনুই দিয়ে হাচি সামলান।
০ ফ্লু প্রতিরোধে টিকা। টিকাতে রয়েছে নিরীহ দুর্বল ফ্লু ভাইরাস, শরীর সহজে চিনতে পারে ভাইরাসকে, তাই লড়াই করে। শিশুদের, গর্ভবতী নারী ও বয়স্কদের জন্য বড় প্রয়োজন।
অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক
ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা।
No comments:
Post a Comment