লবণ কী: ঝরঝরে মিহি দানা আর সাদা রংয়ের খাবার লবণ বা নূণের রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। এতে আছে শতকরা ৪০ ভাগ সোডিয়াম আর ৬০ ভাগ ক্লোরাইড।
লবণ কেন প্রয়োজন:লবণ স্বাদে তিতা। স্বাদে তিতা হলেও একটা পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করলে লবণ তরকারী বা ভর্তা-ভাজির স্বাদ বৃদ্ধি করে। মূল এ জন্যই আমরা লবণ ব্যবহার করি। তবে শরীরের জন্য দরকার লবণে থাকা সোডিয়াম। এটি শরীরের পানি আর খনিজ লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের পি.এইচ ঠিক রাখে। সোডিয়াম দরকার শরীরের স্নায়ুর সিগন্যাল পরিবহণ করার জন্য। দরকার মাংসপেশির সংকোচন প্রসারণের জন্যও।
কতটুকু লবণ দরকার : আমাদের দৈনিক সোডিয়াম দরকার ১০০০-৩০০০ মিলিগ্রাম। অনেকের মতে ২৪০০ মিলিগ্রামের বেশি নয়। আর সোডিয়ামের এই চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন খাবার লবণ প্রয়োজন বড়দের ক্ষেত্রে মাত্র ৬ গ্রাম বা প্রায় ১ চা চামচ পরিমাণ। শিশুদের কিডনি বেশি লবণ সহ্য করতে পারে না। তাই তাদের প্রয়োজন আরো কম লবণ। এক থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের প্রয়োজন দৈনিক মাত্র ২ গ্রাম বা তিন ভাগের এক চা চামচ, ৪ থেকে ৬ বছর বয়সীদের জন্য দরকার প্রায় ৩ গ্রাম বা আধা চা চামচ, আর ৭ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫ গ্রাম লবণ প্রয়োজন। দশ বছরোর্ধ শিশুদের প্রয়োজন বড়দের সমান অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ৬ গ্রাম। দৈনিক ৬ গ্রামের চেয়ে কম লবণ খেলে উচ্চরক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, কম লবণ খেলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে প্রায় ১৩ শতাংশ আর ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা কমে প্রায় ১০ শতাংশ। অর্থাৎ কম লবণ খাওয়াই শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
লবণ বেশি খেলে কী সমস্যা: অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যাবে। লবণ শরীরে বাড়তি পানি ধরে রাখে। এতে রক্তের ভলিউম বা পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এ জন্য বেড়ে যায় রক্তচাপ। শরীরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধমনীর সংকোচনও বাড়িয়ে দেয় লবণ। এ জন্যও রক্তচাপ বাড়ে। রক্তচাপ বাড়ার কারণে বেড়ে যায় বিভিন্ন হূদরোগ যেমন ইস্কেমিক হূদরোগ, হার্ট ফেইলিওর ও স্ট্রোক এর ঝুঁকি। শরীরে বাড়তি পানি জমে শরীর একটু মোটাও হয়ে যেতে পারে।
লবণ কম খেতে কী করণীয়: তরকারীতে লবণ হওয়া চাই পরিমিত। আমরা অনেকেই লবণ দিয়েই খাওয়াটা শুরু করি। নুণ খাই যার, গুণ গাই তার- সেজন্য হয়ত। ফারসিতে লবণকে বলে 'নেমক'। 'নেমক' খেয়ে গুণ না গাইলে হয় 'নেমক-হারাম'। বাড়তি কাঁচা লবণ বা পাতে লবণ খাওয়া পরিহার করুন। পারলে টেবিল থেকে লবণদানি সরিয়ে রাখুন। এতে লবণ গ্রহণ কমে যাবে শতকরা অন্তত ১০-১৫ ভাগ। লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন লবণাক্ত মাছ, চিপস, ক্রেকার্স, লবণাক্ত বিস্কুট, কেচআপ, লবণ-বাদাম, পনির, বেকিং পাউডার ইত্যাদি খাওয়াও কমাতে হবে যথেষ্ট পরিমাণে। ফাস্ট ফুডেও যোগ করা হয় বাড়তি লবণ। ফাস্ট ফুডও তাই পরিহার করুন। বড়ই, তেঁতুল, আমলকি, আমড়া, জলপাই, জাম্বুরা, আনারস, কামরাঙা- এ জাতীয় টক ফল লবণ দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। দেখবেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবণ আর খাওয়া হচ্ছে না।
ডাঃ মোঃ শহীদুলস্নাহ্
বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
কমিউনিটি বেজড্ মেডিকেল কলেজ ময়মনসিংহ
No comments:
Post a Comment