Search This Blog

Tuesday, May 10, 2011

ফুসফুসের সুস্থতায় করণীয়


শুক্র, মে ২০১১, ২৩ বৈশাখ ১৪১৮
ফুসফুসের সুস্থতার জন্য সব সময়ই ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। ফুসফুসের রোগ দেখা গেলেই চিকিত্সক ওষুধ প্রয়োগ করেন। অথচ কিছু কিছু ওষুধ আছেযেগুলো ফুসফুসের উপর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সাধারণ মাত্রায় সেবন করলেও কিছু কিছু ওষুধ শ্বাসনালী, এলভিওলি এবংফুসফুসের আবরণীর প্রতি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নিদ্রাবর্ধক ওষুধ  শ্বাসতন্ত্রের ফেইল্যুর বা ব্যর্থতা ঘটাতে পারে। এন্টিকোয়াগুলেন্ট জাতীয় ওষুধ খেলে কফের সাথে রক্ত যেতে পারে এবং মাংশপেশীর শিথিলকারী ওষুধ খেলে শ্বাসতন্ত্রের মাংসকে অবশ করে দিতে পারে। এগুলোহলো সবই ওষুধের পরোক্ষ প্রভাব। যে সমস্যাটি বেশী দেখতে পাওয়া যায় সেটা হলো প্রদাহনাশক ওষুধ কিংবা বিট ব্লকার খেলে হাঁপানি রোগ বেড়ে যেতেপারে
ওষুধ সংক্রান্ত হাঁপানি;বিটা ব্লকার: হাঁপানি কিছু ওষুধের প্রভাবে হতে অথবা বেড়ে যেতে পারে। যারা ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলোতে নিয়োজিত আছেনতারা কিছু ওষুধের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারেন। কারণ ওষুধগুলো তাদের শ্বাসের সাথে ফুসফুসে ঢুকতে থাকে। বিশেষ কিছু ধরণের ওষুধের মধ্যেপেনিসিলিন, সিমিটিডিন, পাইপেরাজিন, সেফালোস্পোরিন এবং মিথাইলডোপা। হাঁপানি রোগীকে যে ওষুধটি সবচেয়ে বেশী সমস্যায় ফেলে সেটা হলো বিটাব্লকার। এটা এখন অনেকেরই জানা হয়ে গেছে যে, বিটা ব্লকার হাঁপানি রোগীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। কিন্তু গোলযোগ তখনই দেখা দেয় যখন চিকিত্সকরাবিটা ব্লকার বুক ধড়ফড় এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য লিখে থাকেন এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য বিটা ব্লকার একটি প্রকৃত কার্যকর ওষুধ বটে। অথচ বিটাব্লকার ব্যবহার হাঁপানি রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ। এমনকি চোখের ড্রপে বিটা ব্লকার থাকলেও হাঁপানির আক্রমণ হতে দেখা গেছে। তবে প্রোপ্রানোলল খেলে যতটাবিপদের সম্ভাবনা থাকে এটিনোলল বা মেটোপ্রোলল খেলে ততটা বিপদ নাও ঘটতে পারে। যদিও হাঁপানিতে এগুলো ব্যবহার না করাই শ্রেয়। এই ধরণেরহাঁপানি আক্রমণে সালবুটামল, টারবুটালিন, ইনহেলারের সাহায্যে ব্যবহার করলে রোগীর শ্বাসকষ্ট কমে যায়। তাই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের বিটাব্লকার না দিয়ে ক্যালসিয়াম এন্টাগোনিষ্ট দিয়ে চিকিত্সা করাই শ্রেয়
ব্যথানাশক এবং প্রদাহনাশক ওষুধ: এসপিরিনজনিত হাঁপানি অনেক বছর ধরেই পরিচিতি লাভ করেছে। তবে সম্ভবত: প্রায় সব প্রদাহনাশক: বেদনা নিরোধওষুধই হাঁপানির আক্রমণ বাড়াতে পারে। তাই হাঁপানি রোগীকে যদি এই জাতীয় ওষুধ সেবন করাতেই হয় তাহলে প্রথম ডোজটি চিকিত্সকের পূর্ণ আওতাধীনরেখে খাওয়ানোই ভালো। এসপিরিন এন্ড ইন্ডোমেথাসিন বেশী ভয়ঙ্কর, হাঁপানি আক্রমণের জন্য দায়ী। প্যারাসিটামল ব্যাপারে যথেষ্ট নিরাপদ বলে আমিমনে করি। তবুও যারা ওষুধের প্রতি অতি মাত্রায় সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামলের ব্যবহারও সতর্কভাবে করতে হবে। বেদনানাশক ওষুধের প্রতিসংবেদনশীল রোগীদেরকে খুব অল্প মাত্রায় তা প্রয়োগ করে ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়িয়ে সংবেদনশীলতা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। হঠাত্ করেএমাইনোফাইলিন প্রতিক্রিয়ার জন্য শ্বাসনালীর সংকোচন হতে পারে। যদি আন্ত:শীরাপথে পেনিসিলিন অথবা আয়রণ ডেক্সটান  কমপ্লেক্স দেয়া হয় তখনওপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যে ওষুধ প্রয়োগ করে হাঁপানির আক্রমণ দূর করা হয়, কিছু অতি সংবেদনশীল হাঁপানি রোগী রয়েছে তাদের বেলায় সেইওষুধগুলো আরও বেশী অঘটন ঘটাতে পারে। ওষুধগুলো হাঁপানি চিকিত্সায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন এমাইনোফাইলিন অথবা আন্ত:শীরা পথের হাইড্রোকোর্টিসনসল্ট
ওষুধ জনিত কাশি: আজকাল উচ্চ রক্তচাপের চিকিত্সার বহুল ব্যবহূত ওষধ যেমন ক্যাপটোপ্রিল, এনাপ্রিল যাকে এনজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইমইনহিবিটর বলে সেগুলো ভয়ঙ্কর ধরণের কাশির জন্ম দেয় যেখানে খুব একটা কফ থাকে না। তবে ওষুধগুলোতে হাঁপানি হয় না। তাই একজন উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগী যদি খুব কাশিতে ভূগে চিকিত্সকের কাছে আসে তখন প্রথমেই খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে রোগী কোন ওষুধ তার উচ্চ রক্তচাপের জন্যসেবন করেছেন। যদি এমন ধরণের ওষুধ খান তাহলে অবিলম্বে তা পরিবর্তন করতে হবে। আন্তর্জাতিক হিসাব মতে, এই ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রয়ার হারশতকরা ভাগ। যদিও আমি যে ট্রায়ালটি সম্পন্ন করেছি তাতে শতকরা ১১ ভাগ পাওয়া গিয়েছে
এডাল্ট রেসপিরেটার ডিসট্রেস সিনড্রোম বা এআরডিএস বলে একটা সমস্যা রয়েছে যাতে রোগী প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভোগে। এই এআরডিএস কোন কোন ক্ষেত্রেহাইড্রোক্লোরথায়াজাইড অথবা বিটাসিমপেথোমাইমেটিক জাতীয় ওষুধের প্রতিক্রিয়ার ফলে দেখা যেতে পারে। এছাড়া সালফোনেমাইড, কিছু কিছুএন্টিবায়োটিক, মেথোট্রেক্সেট এবং প্রোকারবাজিন জাতীয় ওষুধ ইয়োসিনোফিলিয়া ঘটাতে পারে। এই সমস্যা দেখা ফুসফুসের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অসুবিধা দেখাদেয় যা এক্সরেতে ধরা পড়ে। তবে  ভালো দিক হলো এই ওষুধগুলো সেবন বন্ধ করে দিলে সমস্যাগুলো নিজে নিজেই দূর হয়ে যায়। অনেক সময় ষ্টেরয়েডব্যবহার করে রোগীকে তাত্ক্ষণিক সুস্থূতা দেয়া সম্ভব। ইয়োসিনোফিলিয়া ছাড়াও ফুসফুসে এলভিওলাইটিস ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এইওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে নাইট্রোফুরানটয়েন, ব্লিওমাইসিন প্রভূতি ওষুধ
তাহলে দেখা যাচ্ছে এমনিতেই ধূমপানে পরিবেশ দূষণের জন্য বক্ষব্যাধি হয়। আবার অনেক রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহূত ওষুধও ফুসফুসের অনেকসমস্যার জন্মদাতা। তাই ফুসফুস এবং ওষুধ এই দুটির ব্যাপারে রোগী এবং চিকিত্সক উভয়কেই সচেতন থাকতে হবে।
অধ্যাপক ডা: ইকবাল হাসান মাহমুদ, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেষ্ট সেন্টার, ৮৫ মগবাজার, ওয়ারলেছ মোড়, ঢাকা

No comments:

Post a Comment