Search This Blog

Saturday, May 7, 2011

ফিজিওথেরাপি : বিনা ওষুধে বাত, জয়েন্ট পেইন ও প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসার সুযোগ


শুরুর কথা: ফিজিওথেরাপী হচ্ছে মানবদেহ গঠন ভিত্তি করে বিজ্ঞান সম্মত এক ধরনের চিকিসা সেবা পদ্ধতি যা মানুষকে সচল, সক্ষম থাকতে সহায়তাদেয়। কালীন পাকিস্তান ফিজিওথেরাপীর বিকাশ শুরু হয় ৬০ এর দশকে। ১৯৬১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফিজিওথেরাপীর যাত্রা শুরু হয় অধ্যাপকআবুল হোসেনের নেতৃত্বে। কমনওয়েলথ স্কলারসিপ নিয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘ দিন ফিজিওথেরাপীতে উচ্চশিক্ষা প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসলে তার হাতেফিজিওথেরাপী বিভাগের গোড়া পত্তন হয়। শুরুতে ফিজিওথেরাপীর বিকাশ ছিল ধীর গতিতে, পরবর্তীতে স্বাধীনতার যুদ্ধে আহত মুক্তিযুদ্ধাদের পুনর্বাসনেরজন্য ফিজিওথেরাপী চিকিসার গুরুত্ব হয়ে পড়ে অপরিসীম।

সে
গুরুত্ব উপলব্ধি করে বৃটিশ ফিজিওথেরাপিষ্ট (ঠধষড়রব ঞধুষড়ৎ) ভেলোরি টেলর ১৯৬৯ সনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন।স্বাধীনতার পর বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে আহত মুক্তি যোদ্ধাদের ফিজিওথেরাপী দেন এবং ১৯৭৯ সালে সাভারে ঈজচ (পক্ষাঘাত গ্রস্থ পুন:বাসন কেন্দ্র) স্থাপন করেন। ঈজচ বৃটিশ অন্য দেশী দাতা গোষ্টী থেকে ব্যাপক অর্থ সংগ্রহ করে সাভারে মিরপুরে ফিজিওথেরাপী সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন। মার্কিনঅর্থোপেডিক সার্জন ডা: রোনাল জি গার্সট ৎ. জড়হধষফ ধেংঃ ১৯৭১ সালে ঘওঞঙজ- পঙ্গু হাসপাতালে কাজ শুরু করেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশসরকারকে এবং বাংলাদেশের চিকিসকদের ফিজিওথেরাপীর গরুত্ব প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ক্রমাগত অবহিত করেন। (জাতীয় অর্থপেডিক্স পুনর্বাসনকেন্দ্র) তার চেষ্টায় ফিজিওথেরাপী নতুন আঙ্গিকে পরিচিতি পেতে শুরু করে।

গণস্বাস্থ্য
কেন্দ্র একটি জনহিতকর দাতব্য প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে বাংলাদেশেরআহত মুক্তিযুদ্ধা শরনার্থীদের চিকিসার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল দিয়ে যাত্রা শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধেরঅভিজ্ঞতার কারণে উপলব্ধি করে যে অপারেশনের পরেও আহত রোগীদের বিশেষ ধরনের সেবা শুশ্রুসার জন্য ফিজিওথেরাপীর প্রসার প্রয়োজন। বাংলাদেশফিল্ড হাসপাতালের প্রধান শৈল্য কর্মীদের ফিজিওথেরাপী ফিজিকেল মেডিসিন সম্পর্কে অবহিত করেন। ৭০ এর দশকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীরাঅর্থোপেডিক সার্জনদের সহায়তা করেন এবং বিভিন্ন আহতদের সাধারণ সেবা দিতো। ১৯৯৪ সনে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বছর মেয়াদী বিএসসিঅনার্স ফিজিওথেরাপী কোর্স করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আবেদন করে। অধ্যাপক আবুল হোসেন ছিলেন গণস্বাস্থ্য ফিজিওথেরাপীবিভাগের প্রধান।

১৯৯৫
সালে ভারতীয় আয়ুর্বেদীয় চিকিসক বিজয়ন নমব্দিপদ যোগব্যায়াম আয়ুর্বেদীয় ম্যাসাজ থেরাপীকে ফিজিওথেরাপীতে অন্তর্ভূক্ত করেন। ১৯৯৮সালে আরও তিনজন ভারতীয় এমপিটি ফিজিওথেরাপীস্ট গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দেয়। পরবর্তীতে আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওথেরাপী কোর্স চালুকরেছে। চিকিসা বিজ্ঞানকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য উন্নত করার লক্ষ্যে ফিজিওথেরাপী শিক্ষায় অন্যান্য বিষয়গুলোর পাশাপাশি এনাটমি, ফিজিক্স, বায়োমেকানিক্স, ইলেকট্রোথেরাপী, এক্সারসাইজ থেরাপী পড়ানো হয় বলে শরীরের মাংসপেশী, মাংস পেশীর বন্ধনী (লিগামেন্ট) দুই বা ততোধিক হাড়ের সন্ধিজয়েন্ট) সন্ধির কার্যকারিতা পদ্ধতি সম্পর্কে ফিজিওথেরাপী ছাত্রদের অনেক বেশী পড়ানো হয় বলে ফিজিওথেরাপিষ্টরা স্ট্রেচিং বিভিন্ন ব্যায়াম যা শুধুমেশিন দ্বারাই সম্ভব নয়, হাতের মাধ্যমে (মেনুয়্যালী থেরাপী) প্রদান করে শুধু যে রোগের উন্নতি হয় তাই নয় রোগীর সাথে সেবা প্রদানকারীর ভালসুসম্পর্কও তৈরি হয়। আজ কাল অনেক ক্ষেত্রে চিকিসা বিজ্ঞান হয়ে পড়ছে অনেকটা যান্ত্রিক ব্যয়বহুল। রোগীর পুরো সমস্যা না শুনে এবং শারীরিকপরীক্ষা না করে ডায়াগণষ্টিক সেন্টারে প্রেরণে বেশীর ভাগ চিকিসকগণ সাহী হন। দুঃখজনক হলেও সরকারীভাবে ফিজিওথেরাপীর উন্নয়নে যথেষ্টউদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যেখানে বাংলাদেশ প্রতিদিন বাড়ছে ফিজিওথেরাপীর প্রয়োজনীয়তা। (
ফিজিওথেরাপীর
গরুত্ব বাড়ছে কেন: প্রথমত: বাংলাদেশে বয়োবৃদ্ধ লোকের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ১০% এর অধিক সংখ্যকলোকের বয়স ৬০ বছরের উর্দ্ধে। অতীতে কেবল অবস্থাসম্পন্ন পরিবারে বয়োবৃদ্ধ লোকের সাক্ষাত পাওয়া যেত। বর্তমানে গ্রামের প্রায় পরিবারে একজনহলেও একজন বৃদ্ধ পুরুষ বা মহিলার সাক্ষাত পাওয়া যায় বড় কোন রোগ না থাকা সত্বেও অনেকে অচল হয়ে বাড়ীতে বসে থাকেন।

দ্বিতীয়ত
: পরিবেশগত পুষ্টিহীনতার কারণেও প্রতিবন্ধী শিশু বয়স্ক লোকের সংখ্যা বাড়ছে।

তৃতীয়ত
: যানবাহন বৃদ্ধি হওয়াতে দুর্ঘটনা বাড়ছে। দুর্ঘটনায় সবাই মারা যায় না। যারা বেচেঁ থাকেন তারা পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিসহ জীবন জাপন করে।অন্যদিকে দুর্ঘটনায় যারা বেচেঁ যাচ্ছেন হাসপাতালে চিকিসা ব্যবস্থা চালু থাকলেও তা অপরিপূর্ণ, কারণ একজন ডাক্তার ব্যান্ডেজ বা পস্নাস্টার করেদীর্ঘদিন বিশ্রামে থাকার কারণে মাংসপেশী শুকিয়ে যায় বা জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায় যা ফিজিওথেরাপী চিকিসা দ্বারা সচল রাখা যায়। কিন্তু অনেকেই তাজানেন না এবং রেফারেল পদ্ধতির প্রচলন না থাকায় এক চিকিসক ফিজিওথেরাপিষ্টের নিকট রোগী রেফার্ড করেন না। ফিজিওথেরাপীর গুরুত্ব দ্রুত বৃদ্ধিপেলেও স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এখনও প্রত্যেক জেলা উপজেলা পর্যায়ে দুই জন করে ফিজিওথেরাপিষ্টের পদ সৃষ্টি হয়নি এবং নূ্যনতম সুবিধা সাধারণ যন্ত্রপাতি দিয়ে ফিজিওথেরাপী জন্ম লাভও করেনি।

গণস্বাস্থ্য
কেন্দ্রে ফিজিওথেরাপী: বর্তমানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তার ব্যতিক্রমী চিন্তা ভাবনা থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর ইন্র্টানশীপ কালিন নূ্যনতম একসপ্তাহ ফিজিওথেরাপী বিভাগে রোগীর শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপী সেবা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করেন। মেডিকেল ছাত্ররা তাদের এমবিবিএস শিক্ষাগ্রহণ কালেও ফিজিওথেরাপী আয়র্ুবেদীয় চিকিসা সম্পর্কে কয়েক সপ্তাহ তাত্তি্বক প্রাকটিকেল ক্লাশ করে।

গণস্বাস্থ্য
কেন্দ্র ৪টি সেন্টারের সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল, শ্রীপুর গণস্বাস্থ্য (গাজীপুর), গাইবান্দা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ আরও ১৬ টিশাখায় কমিউনিটি ফিজিওথেরাপী বিভাগ চালু করেছে। এমন কি বাসায় গিয়েও ফিজিওথেরাপী সেবা প্রদান করা হয়। প্রতিটি সেন্টারে আছে আধুনিক উন্নতমানের যন্ত্রপাতি যেখানে বিদু্যনাই সেখানে আছে ব্যাটারী চালিত বা চার্জ সিস্টেম ইলেকট্রোথেরাপী যন্ত্রপাতি।

গণবিশ্ববিদ্যালয়
হতে বছর কোর্স সম্পূর্ণ করে এক বছর ইন্টার্নশীপ কালে কমিউনিটি ফিজিওথেরাপী বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য নূ্যনতম মাস বিভিন্নচরসহ অন্যান্য শাখা থেকে অতিরিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করে। গ্রামের পরিবেশ মানুষের সাথে মিশে তারা ফিজিওথেরাপী করেন নবীন ফিজিওথেরাপিষ্টগণ।

যেসব
রোগে ফিজিওথেরাপীতে উপকার হয়:-

. আথ্র্যাইটিস

. ফ্রোজেন সোলডার

. সায়াটিকা বা বাত ব্যথা

. স্পনডাইলেসিস (শির দাডায় ব্যথা)

. পিঠে কোমড়ের ব্যথা

. মাংসপেশীর ব্যথা

. প্যারালাইসিস

. মস্তিষ্কের আঘাতজনিত বিকলাঙ্গ

. ক্রীড়া জনিত আঘাত

১০
. হাড় ভাঙ্গার পরবর্তী মাংস পেশী শুকিয়ে বা শক্ত হয়ে যাওয়া।

১১
. পুড়ে যাওয়ার পরবর্তী মাংসপেশী শক্ত হয়ে গেলে।

১২
. মুখ বেঁকে যাওয়া

১৩
. অবস্থার ধরন পরিবর্তন

১৪
. টেনিস এলবো ইত্যাদি

গণস্বাস্থ্য
কেন্দ্রে ফিজিওথেরাপী চিকিসা সুবিধা বা ব্যয়: শুধু যন্ত্রপাতির উপর নির্ভরশীল নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে (মেনু্যয়্যালী থেরাপী) হাতের মাধ্যমেকরানো হয়। চিকিসা ব্যয় অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে খুবই কম। কম খরচে চিকিসার জন্য স্বাস্থ্যবীমার ব্যবস্থা আছে।

নাসিমা
ইয়াসমিন

সিনিয়র
ফিজিওথেরাপিস্ট

হেড
-ক্লিনিক্যাল এন্ড কমিউনিটি ফিজিওথেরাপিস্ট

গণস্বাস্থ্য
নগর হাসপাতাল,ধানমন্ডি, ঢাকা

m~Z&ª: দৈনিক ইত্তেফাক(22/01/2011)

No comments:

Post a Comment