লেখক: অধ্যাপক ডা: আনিসুর রহমান |
একটি সার্জিক্যাল ইমার্জেন্সী এপেন্ডিসাইটিস হচ্ছে এপেন্ডিহ্নের প্রদাহ, যা ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সংযোগস্থলে অবস্থিত আঙ্গুলের মতো দেখতে একটি ছোট থলি। পীড়া, আঘাত বা সংক্রমণের কারণে এপেনডিক্সে প্রদাহ হয়, যাতে এপেন্ডিক্স ফুলে ওঠে এবং ব্যথার জন্ম দেয়। এপেন্ডিসাইটিস এর চিকিত্সা নেওয়া জরুরী, কেননা এর একটি জটিলতা হচ্ছে পারফোরেশন বা ফেটে যাওয়া (বার্স্ট এপেন্ডিক্স)। যদি একটি সংক্রমিত এপেন্ডিক্স ফেটে যায়, সারা পেট জুড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। ফলে পেরিটোনাইটিসের মত পেটের পর্দার মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে। যদি দ্রুততার সাথে চিকিত্সা করা না হয়, পেরিটোনাইটিসের কারণে মৃত্যুও হতে পারে। ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি আছে বলেই, এপেন্ডিসাইটিসকে একটি জরুরী অবস্থা হিসাবে ধরা হয়।
কিভাবে হয়: বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই, মলের টুকরা আটকে এপেন্ডিক্সের খোলা মুখ বন্ধ হয়ে গেলে, প্রদাহ শুরু হয়। পরিপাকতন্ত্রে কোন সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ার কারণেও এটা হতে পারে।
উপসর্গগুলো কি কি: রোগী ব্যাতিরেকে উপসর্গের জের ফের হতে পারে; যেমন-
* পেটে ব্যথা, সাধারণত: নাভীর কাছ থেকে শুরু হয়ে পেটের ডান দিকে নিম্নাংশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।
* ক্ষুধামন্দা
* বমি বমি ভাব হওয়া
* বমি হওয়া
* কোষ্ট কাঠিন্য বা ডায়ারিয়া
* পায়ুপথে বাতাস চলাচলে অসুবিধা
* জ্বর, তবে সাধারণত: অতি উচ্চমাত্রায় নয়।
* পেরিটোনাইটিসের উপসর্গগুলো আরও অনেক মারাত্মক। ব্যথার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে এবং সারা পেট জুড়ে থাকে। পেট ফুলে যায় এবং পেটে শক্ত ও চাপ চাপ ভাব অনুভূত হয়।
কিভাবে রোগ নির্ণয় হয়: মাঝে মাঝে এপেন্ডিসাইটিস রোগ নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, বিশেষ করে ছোট শিশু, বয়স্ক লোক এবং গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে। আপনার কনসালটেন্ট আপনার উপসর্গগুলো পর্যালোচনা করবেন এবং আপনাকে পরীক্ষা করবেন। আপনাকে নিম্নবর্ণিত পরীক্ষাগুলো করতে হতে পারে।
* ব্রাড টেস্ট
* ইউরিন টেস্ট
* চেস্ট এক্সরে বা বুকের এক্সরে (যেহেতু ডান দিকের ফুসফুসের নিম্নাংশে নিউমোনিয়ার কারণেও পেটে ব্যথা হতে পারে।
* পেটের এক্সরে বা আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা
* কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পেটের সিটি স্ক্যান।
কিভাবে এরোগের চিকিত্সা করা হয়: যদি রোগ নির্ণয় অস্পষ্ট হয়, তবে ইমার্জেন্সী রুমে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করে ১২-২৪ ঘন্টার জন্য রোগীকে নজরদারীতে রাখতে হবে, এটা জানার জন্য যে অপারেশন লাগবে কিনা। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশনের মাধ্যমে এপেনডিক্স ফেলে দিতেই হয়। অপারেশনের নাম হচ্ছে এপেন্ডেকটোমি। সাধারণত: ল্যাপারোস্কোপিক (কী হোল) পদ্ধতিতে পেটের নিচের অংশে তিনটা ছোট ছিদ্র করে এই অপারেশন করা হয়। জটিলতাপূর্ণ রোগীদের ক্ষেত্রে তলপেট কেটে এই অপারেশন করা হয়। পেরিটোনাইটিস হলেও অপারেশন-ই এর চিকিত্সা এবং এই অবস্থাকে সার্জিক্যাল ইমার্জেন্সী হিসাবে গণ্য করা হয়। পেরিটোনাইটিসের উপসর্গ সম্বলিত রোগীকে ইমার্জেন্সী বিভাগে যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করা উচিত। সার্জারির আগে রোগীকে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হবে। রোগীর এপেনডিক্স ফেটে গিয়ে পেরিটোনাইটিস হয়েছে কি না তার উপর ভিত্তি করে এন্টিবায়োটিক চিকিত্সা ২৪ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় ধরে চলতে পারে।
অপারেশন পরবর্তী প্রথম দিনে রোগীকে হয়তো কোন খাবার বা তরল খেতে দেয়া হবে না। এর পর রোগীকে সামান্য পরিমাণ পানি, পরে তরল খাবার এবং অবশেষে শক্ত খাবার দেয়া হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না রোগী স্বাভাবিক ভাবে নিয়মিত খাবার খেতে পারছেন। ল্যাপারোস্কোপিক এপেনডেকটোমির পরে সাধারণত: রোগীকে ২ দিনেরও কম সময় হাসপাতালে থাকতে হয়। পেট কেটে ওপেন পদ্ধতিতে অপারেশন করা হলে হয়তো তা ৪ দিনে স্থায়ী হতে পারে। যদি রোগীর এপেনডিক্স ফেটে যায়, তবে হাসপাতালে ৭ দিন বা তারও বেশি থাকতে হতে পারে। এপেনডিক্স ছাড়াও রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।
কিভাবে নিজের যত্ন নিবেন:
* বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাবেন
* আপনার কনসালটেন্টের পরামর্শ অনুযায়ী প্রচুর আমিষযুক্ত খাবার খাবেন
* বারে বারে, অল্প অল্প খাবার খাবেন
* ধীরে ধীরে আপনার হাঁটা ও কাজের পরিমাণ বাড়াবেন
* শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্দেশিত ওষুধগুলো সেবন করবেন। অপারেশনের ক্ষতস্থানে নিম্নের লক্ষণগুলো দেখা দিলে কনসালটেন্টকে জানানাতে হবে।
* সেলাইয়ের স্থানে লাল হয়ে গেলে বা উষ্ণতা বোধ করলে
* ক্ষত থেকে কোন রস বের হলে
* জ্বর হলে
অপারেশনের পরে যদি নিম্নের উপসর্গগুলো দেখা যায়, তবে কনসালটেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে হবে:
* ক্রমাগত বমি হওয়া
* পেটে ব্যথা বেড়ে যাওয়া
* জ্বর বেডে যাওয়া
* ডায়রিয়া
* অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
এপেন্ডিসাইটিস হওয়া কি রোধ করা যায়:এপেন্ডিসাইটিস রোধ করার কোন উপায় নেই। তবে যারা আঁশযুক্ত খাবার যেমন কাঁচা ফল বা শাক সবজি নিয়মিত খান, তাদের এপেন্ডিসাইটিস কম হয়ে থাকে। যদি রোগীর মনে হয় এপেন্ডিসাইটিস হয়েছে, দেরী না করে কনসালটেন্টের সাথে যোগাযোগ করুন। কেননা এপেনডিক্স সংক্রমণযুক্ত হলে, ফেটে যাওয়ার আগেই তা অপসারণ করা দরকার।
অধ্যাপক ডা: আনিসুর রহমান
কো-অর্ডিনেটর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট
জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি
এ্যাপোলো হসপিটালস্, ঢাকা
m~Z&ª: দৈনিক ইত্তেফাক(30/04/2011)
একটি সার্জিক্যাল ইমার্জেন্সী এপেন্ডিসাইটিস হচ্ছে এপেন্ডিহ্নের প্রদাহ, যা ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সংযোগস্থলে অবস্থিত আঙ্গুলের মতো দেখতে একটি ছোট থলি। পীড়া, আঘাত বা সংক্রমণের কারণে এপেনডিক্সে প্রদাহ হয়, যাতে এপেন্ডিক্স ফুলে ওঠে এবং ব্যথার জন্ম দেয়। এপেন্ডিসাইটিস এর চিকিত্সা নেওয়া জরুরী, কেননা এর একটি জটিলতা হচ্ছে পারফোরেশন বা ফেটে যাওয়া (বার্স্ট এপেন্ডিক্স)। যদি একটি সংক্রমিত এপেন্ডিক্স ফেটে যায়, সারা পেট জুড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। ফলে পেরিটোনাইটিসের মত পেটের পর্দার মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে। যদি দ্রুততার সাথে চিকিত্সা করা না হয়, পেরিটোনাইটিসের কারণে মৃত্যুও হতে পারে। ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি আছে বলেই, এপেন্ডিসাইটিসকে একটি জরুরী অবস্থা হিসাবে ধরা হয়।
কিভাবে হয়: বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই, মলের টুকরা আটকে এপেন্ডিক্সের খোলা মুখ বন্ধ হয়ে গেলে, প্রদাহ শুরু হয়। পরিপাকতন্ত্রে কোন সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ার কারণেও এটা হতে পারে।
উপসর্গগুলো কি কি: রোগী ব্যাতিরেকে উপসর্গের জের ফের হতে পারে; যেমন-
* পেটে ব্যথা, সাধারণত: নাভীর কাছ থেকে শুরু হয়ে পেটের ডান দিকে নিম্নাংশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।
* ক্ষুধামন্দা
* বমি বমি ভাব হওয়া
* বমি হওয়া
* কোষ্ট কাঠিন্য বা ডায়ারিয়া
* পায়ুপথে বাতাস চলাচলে অসুবিধা
* জ্বর, তবে সাধারণত: অতি উচ্চমাত্রায় নয়।
* পেরিটোনাইটিসের উপসর্গগুলো আরও অনেক মারাত্মক। ব্যথার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে এবং সারা পেট জুড়ে থাকে। পেট ফুলে যায় এবং পেটে শক্ত ও চাপ চাপ ভাব অনুভূত হয়।
কিভাবে রোগ নির্ণয় হয়: মাঝে মাঝে এপেন্ডিসাইটিস রোগ নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, বিশেষ করে ছোট শিশু, বয়স্ক লোক এবং গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে। আপনার কনসালটেন্ট আপনার উপসর্গগুলো পর্যালোচনা করবেন এবং আপনাকে পরীক্ষা করবেন। আপনাকে নিম্নবর্ণিত পরীক্ষাগুলো করতে হতে পারে।
* ব্রাড টেস্ট
* ইউরিন টেস্ট
* চেস্ট এক্সরে বা বুকের এক্সরে (যেহেতু ডান দিকের ফুসফুসের নিম্নাংশে নিউমোনিয়ার কারণেও পেটে ব্যথা হতে পারে।
* পেটের এক্সরে বা আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা
* কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পেটের সিটি স্ক্যান।
কিভাবে এরোগের চিকিত্সা করা হয়: যদি রোগ নির্ণয় অস্পষ্ট হয়, তবে ইমার্জেন্সী রুমে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করে ১২-২৪ ঘন্টার জন্য রোগীকে নজরদারীতে রাখতে হবে, এটা জানার জন্য যে অপারেশন লাগবে কিনা। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশনের মাধ্যমে এপেনডিক্স ফেলে দিতেই হয়। অপারেশনের নাম হচ্ছে এপেন্ডেকটোমি। সাধারণত: ল্যাপারোস্কোপিক (কী হোল) পদ্ধতিতে পেটের নিচের অংশে তিনটা ছোট ছিদ্র করে এই অপারেশন করা হয়। জটিলতাপূর্ণ রোগীদের ক্ষেত্রে তলপেট কেটে এই অপারেশন করা হয়। পেরিটোনাইটিস হলেও অপারেশন-ই এর চিকিত্সা এবং এই অবস্থাকে সার্জিক্যাল ইমার্জেন্সী হিসাবে গণ্য করা হয়। পেরিটোনাইটিসের উপসর্গ সম্বলিত রোগীকে ইমার্জেন্সী বিভাগে যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করা উচিত। সার্জারির আগে রোগীকে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হবে। রোগীর এপেনডিক্স ফেটে গিয়ে পেরিটোনাইটিস হয়েছে কি না তার উপর ভিত্তি করে এন্টিবায়োটিক চিকিত্সা ২৪ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় ধরে চলতে পারে।
অপারেশন পরবর্তী প্রথম দিনে রোগীকে হয়তো কোন খাবার বা তরল খেতে দেয়া হবে না। এর পর রোগীকে সামান্য পরিমাণ পানি, পরে তরল খাবার এবং অবশেষে শক্ত খাবার দেয়া হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না রোগী স্বাভাবিক ভাবে নিয়মিত খাবার খেতে পারছেন। ল্যাপারোস্কোপিক এপেনডেকটোমির পরে সাধারণত: রোগীকে ২ দিনেরও কম সময় হাসপাতালে থাকতে হয়। পেট কেটে ওপেন পদ্ধতিতে অপারেশন করা হলে হয়তো তা ৪ দিনে স্থায়ী হতে পারে। যদি রোগীর এপেনডিক্স ফেটে যায়, তবে হাসপাতালে ৭ দিন বা তারও বেশি থাকতে হতে পারে। এপেনডিক্স ছাড়াও রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।
কিভাবে নিজের যত্ন নিবেন:
* বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাবেন
* আপনার কনসালটেন্টের পরামর্শ অনুযায়ী প্রচুর আমিষযুক্ত খাবার খাবেন
* বারে বারে, অল্প অল্প খাবার খাবেন
* ধীরে ধীরে আপনার হাঁটা ও কাজের পরিমাণ বাড়াবেন
* শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্দেশিত ওষুধগুলো সেবন করবেন। অপারেশনের ক্ষতস্থানে নিম্নের লক্ষণগুলো দেখা দিলে কনসালটেন্টকে জানানাতে হবে।
* সেলাইয়ের স্থানে লাল হয়ে গেলে বা উষ্ণতা বোধ করলে
* ক্ষত থেকে কোন রস বের হলে
* জ্বর হলে
অপারেশনের পরে যদি নিম্নের উপসর্গগুলো দেখা যায়, তবে কনসালটেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে হবে:
* ক্রমাগত বমি হওয়া
* পেটে ব্যথা বেড়ে যাওয়া
* জ্বর বেডে যাওয়া
* ডায়রিয়া
* অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
এপেন্ডিসাইটিস হওয়া কি রোধ করা যায়:এপেন্ডিসাইটিস রোধ করার কোন উপায় নেই। তবে যারা আঁশযুক্ত খাবার যেমন কাঁচা ফল বা শাক সবজি নিয়মিত খান, তাদের এপেন্ডিসাইটিস কম হয়ে থাকে। যদি রোগীর মনে হয় এপেন্ডিসাইটিস হয়েছে, দেরী না করে কনসালটেন্টের সাথে যোগাযোগ করুন। কেননা এপেনডিক্স সংক্রমণযুক্ত হলে, ফেটে যাওয়ার আগেই তা অপসারণ করা দরকার।
অধ্যাপক ডা: আনিসুর রহমান
কো-অর্ডিনেটর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট
জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি
এ্যাপোলো হসপিটালস্, ঢাকা
m~Z&ª: দৈনিক ইত্তেফাক(30/04/2011)
No comments:
Post a Comment