Search This Blog

Wednesday, October 12, 2011

সুস্থ থাকুন ভ্রমনে

এখন চলছে ভ্রমনের মৌসুম। এই লেখা যখন আপনার হাতে - হতে পারে আপনি তখন ব্যাগপত্র গুছিয়ে ভ্রমনে। হতে পারে বাসে কিংবা ট্রেনে। অথবাপ্রস্তুুতি নিচ্ছেন বেরিয়ে পড়বার। শীত ভ্রমনের জন্য উপযুক্ত সময়। তবে ভ্রমনে হতে পারে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। অসুখ বিসুখে ভ্রমনেরআনন্দটাই যেন মাটি না হয়ে যায় তার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
 

মোশন সিকনেস: মোশন সিকনেস' ভ্রমনের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। 'মোশন সিকনেস' মূলত মস্তিকের এক ধরনের সমস্যা। বিশেষ করে বাস, প্রাইভেটকার বা জাতীয় অন্যবাহন গুলিতে সমস্যা হয়। শরীরের অন্তঃকর্ণ আমাদের শরীরের গতি জড়তার ভারসাম্য রক্ষা করে। যখন গাড়ীতেচড়ি তখন অন্তঃকর্ণ মস্তিষ্কে খবর পাঠায় যে সে গতিশীল। কিন্তুু চোখ বলে ভিন্ন কথা। কারণ তার সামনের বা পাশের মানুষগুলো কিংবা গাড়ীর সিটগুলোতো স্থির। চোখ আর অন্তঃকর্ণের এই সমন্বয়হীনতার ফলে তৈরী হয় 'মোশন সিকনেস' 'মোশন সিকনেস' বমির ভাব হয়। সেই সাথে মাথা ঘোরা, মাথাধরা প্রভৃতি। মোশন সিকনেস থেকে বাঁচার উপায় হলো, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা। বড় বড় শ্বাস নিতে হবে। প্রয়োজন হলে চোখ বুজে থাকুন। বইপড়বেন না বা স্থির কোন কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। আদা চিবাতে পারেন। মোশন সিকনেসে কাজে দেবে। ভ্রমনে যাদের বেশী সমস্যা হয় তারাগাড়ীতে ওঠার আধঘন্টা আগে ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধ খেয়ে নিতে পারেন।

ট্রাভেলার্স ডায়রিয়া: ভ্রমনের খুব কমন একটি সমস্যা। বেশ কয়েকপদের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের কারণে এটি হয়। সাধারণত: বিভিন্ন ধরনের খাবারযেমন অল্প সিদ্ধ মাংস, সি ফুড, অপাস্তরিত দুধ এবং দুগ্ধ জাত খাবার, পানি ইত্যাদির মাধ্যমে এটি ছড়ায়। তাই খাবার এবং পানির ব্যাপারে সাবধানথাকুন।

ডিপ ভেইন থ্রম্বসিস: দীর্ঘ ভ্রমনে আরেকটি সমস্যা হল 'ডিপ ভেইন থ্রম্বসিস' অনেকক্ষন বসে থাকলে শরীরের গভীর অংশের শিরাগুলোতে রক্ত জমাট বেঁধেথ্রম্বাস তৈরী হয়। এই থ্রম্বাস গুলো ব্রেইনে চলে গেলে স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। তাই দর্ীঘ ভ্রমনে একটানা বসে না থেকে একটু হাঁটাচলা করুন। সম্ভব না হলেজায়গায় বসেই হাত পা নাড়-ন। এই সমস্যাটা বয়স্কদের বেশী হয়।

ভ্রমন যখন পাহাড়ে: বাংলাদেশের পাহাড়ী এলাকায় ভ্রমনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ম্যালেরিয়া। তাই পার্বত্য এলাকায় ভ্রমনের পূর্বেই প্রয়োজনেচিকিসকের পরামর্শ অনুযায়ী ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধক ওষুধ খেয়ে নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে মশা নিধনকারী সপ্রে বা এরোসল, মশারী ব্যবহারকরবেন। আকাশে ভ্রমন যখন: আকাশ ভ্রমনে সমস্যা হয় উচ্চতার কারণে। আমরা জানি একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার পরে বাতাসে অক্সিজেনের চাপ কমতেথাকে। মানব শরীরে অক্সিজেনের চাপের সাথে বাতাসের এই অক্সিজেনের চাপের তারতম্য শরীরে নানারকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যেমন মাথাঘোরা, কানেতালালাগা, বমির ভাব হওয়া। এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। চুইংগাম চাবানো, ঘনঘন ঢোক গিলা, জুস খাওয়া ইত্যাদি হতে পারে এরসমাধান। তবে যাদের শ্বাস কষ্ট, হার্টের অসুখ, বুকে ব্যথা (এনজাইনা) প্রভৃতি সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো আরো জটিল হতে পারে। ঠান্ডা, সর্দিনাক বন্ধ থাকলে বিমান ভ্রমন অস্বস্তিকর হতে পারে। বেড়ে যেতে পারে সাইনাসের সংক্রমণ। তাই আগেভাগে চিকিসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শিশু সুস্থ থাকুক: ভ্রমনে শিশুদের প্রতি বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। ঠান্ডা, সর্দি, শ্বাসনালীর ইনফেকশন শিশুদের সেই সাথে আপনাদের ভ্রমনের আনন্দকেমাটি করে দিতে পারে। কোন ভাবেই ঠান্ডা লাগানো যাবেনা গরম কাপড় মাফলার কান টুপি নিশ্চিত করুন। বাইরের খাবার হতে সাবধান। প্যারাসিটামল, এন্টিহিসটামিন, নাকের ড্রপ সাথে রাখতে পারেন। ডাক্তার বললে কমন কিছু এন্টিবায়েটিকও রাখতে পারেন।

আন্ত :দেশীয় ভ্রমনে: দেশ ভেদে অসুখ-বিসুখের ধরন মাত্রা বিভিন্ন। যে দেশে যাবেন সে দেশের অসুখ বিসুখ সমর্্পকে আগে থেকেই তথ্য নেবেন।প্রয়োজনে ভ্যাকসিন দিয়ে নিবেন। হেপাটাইটিস , হেপাটাইটিস -বি, টাইফয়েড, চিকেন পক্স, ইয়েলো ফিভার (যে সব দেশে ইয়োলো ফিভারের প্রকোপ আছেসে দেশের ক্ষেত্রে) প্রভৃতি ভ্যাকসিন সম্ভব হলে দিয়ে নেবেন। সেসব দেশের আবহাওয়া তাপমাত্রা সমর্্পকে আগেভাগে জেনে নেবেন। প্রয়োজনে সেঅনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

আরো কিছু টিপস: ০০ ভ্রমনে এসিডিটি হতে পারে। আগে থেকেই এসিডিটির ওষুধ সাথে রাখুন। ০০ উচ্চ রক্তচাপের রোগীরাও বিশেষ সর্তক থাকবেন।ভ্রমনের দু'একদিন আগে ব্যক্তিগত চিকিসকের চেম্বার ঘুরে আসুন। ০০ ডায়বেটিসের রোগীদের জন্যও একই পরামর্শ। ডায়াবেটিসের রোগীরা ভ্রমনকালীন সময়ে সাথে গস্নুকোজ গোলানো পানির বোতল রাখুন। সুগার কমে 'হাইপোগস্নাইসোমিয়া' হয়ে যেতে পারে যে কোন সময়। ০০ হাতের কাছে বিশুদ্ধপানির বোতল রাখুন। অনিরাপদ খোলা পানি খাবেন না। ০০ বাইরের খাবারের ব্যাপারে সাবধান থাকবেন। অল্প সিদ্ধ মাংস, অপাস্তুরিত দুধ খাবেন না।০০ আপনার ব্যক্তিগত চিকিসকের পরামর্শ অনুযায়ী কমন কিছু এন্টিবায়েটিক সহ জরুরি কিছু ওষুধ সাথে রাখুন। ০০ একটা ট্রাভেল কিট বানিয়ে নিতেপারেন যেখানে থাকবে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ, গজ, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক মলম বা সলু্যশন। ০০ ভ্রমনের ধরন এবং আবহাওয়া অনুযায়ী পোষাকনির্বাচন করুন। জুতার ব্যপারে বাড়তি মনোযোগ প্রয়োজন। আরামদায়ক কেডস হলে ভালো হয়। মেয়েরা হিল জুতা ব্যবহার না করলেই ভালো।

আপনার ভ্রমন আনন্দময় হোক। অসুখ যেন ভ্রমনের সুখকে বিঘি্নত না করে।

ডাঃ গুলজার হোসেন উজ্জ্বল; স্বাস্থ্য নিবন্ধকার

m~Z&ª: দৈনিক ইত্তেফাক(15/01/2011

No comments:

Post a Comment